অপরাধের সাথে বাড়ছে অমানবিকতা

0

প্রায়ই খবর হচ্ছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। শহর, গ্রাম সর্বত্রই গুরুতর অপরাধের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। সমাজের কিছু মানুষও যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। অপরাধের সাথে বাড়ছে অমানবিকতা। আপন-পর, শ্রদ্ধা-স্নেহ সবই যেন ভুলে যাচ্ছে মানুষ। মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন আমরা কোথায় যাচ্ছি। কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। সত্য হচ্ছে, মানুষ আলোকিত দিনের অপেক্ষায় থাকে প্রত্যাশা করে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও আলোকিত হবে। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। সরকার প্রশাসনের প্রতি বাড়বে আস্থা। দেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও বেড়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত মানবিকতা তো প্রশ্নবিদ্ধই রয়েছে। সম্প্রতি কিছু অমানবিক ঘটনা সে প্রশ্নটা বড়ই করছে। মাত্র দু’দিন আগে রংপুরের পীরগাছায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মা-মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন দিলে ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে পীরগাছা থানা পুলিশ। সংবাদ মাধ্যমে আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, ধর্ষণ মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আরেক খবরে প্রকাশ, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউপির এক ওয়ার্ড সদস্য ও তাঁর ভাতিজা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম। ওই ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর ভাতিজা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁরা এলাকার বহু অপকর্মের মূল হোতা। এদিকে, গতকালের খবর ছিল গাইবান্ধায় পিতাকে খুন করেছে পুত্র এবং কুমিল্লায় জনতার প্রহারে ছাত্রলীগ নেতা নিহত।
এমন খবর আরো আছে। শ্রীপুরে ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অনেকের পা জড়িয়ে ধরে ছেলের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন মা। ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। রাজধানীর হাজারীবাগে খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুর সিটির কাশিমপুরের পানিশাল এলাকা থেকে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর নির্মাণাধীন বাড়ির এক নির্মাণ শ্রমিক ‘টাকা লুটের জন্য’ হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে, গতকাল বন্দিদশা থেকে শাবির ভিসিকে উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে যশোরেও ঘটেছে কিছু আমনবিক ঘটনা। এক তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যসহ পর পর ঘটেছে ঘুনের ঘটনা। ধারণা করা যেতে পারে, এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। সামান্য কারণেই যখন খুনের ঘটনা ঘটছে, তখন বলতে হবে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে। জঘন্য বেকার বাড়াচ্ছে নারী নির্যাতন, পাশবিকতা।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে মানুষের দুশ্চিন্তগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার অভাব আরো তীব্র হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দেবে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, তুচ্ছ কারণে এসব অপরাধ থেকে উত্তরণ দ্রুত সময়ে ঘটবে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে। আর সে কারণেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। বিচার বিভাগের কাছে মানুষের ন্যায় বিচার প্রত্যাশা। ন্যায়-বিচার বলতে তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিকে বুঝে থাকেন। আমরাও তেমনিই প্রত্যাশা করি। আশা করি, ন্যায়-বিচারের মাধ্যমেই সমাজে ফিরবে সুস্থতা-মানবিকতা।