কালীগঞ্জে তিন প্রতিবন্ধী সন্তানকেনিয়ে কষ্টে দিন কাটছে হাকিমের

0

শিপলু জামান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)॥ ঠিকমতো খাবার, চিকিৎসা কোনটিই জোটে না। প্রতিদিন বিথী, যুথী, আলামিন, রসুলদের অভাবের সাথে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিন ভাই-বোন প্রতিবন্ধী। আর ছোট বোন যুথী এখনও সুস্থ। এমন অবস্থায় বাবা আবদুল হাকিমের চায়ের দোকানের রোজগারই একমাত্র সম্বল। বাবার অ^ল্প আয়ের সংসারে মানবেতর জীবনযাপন যুথীদের। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের বনখির্দ্দা গ্রামে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার ভাই-বোনের মধ্যে বিথী বড়, আলামিন মেজো, যুথী সেজো আর চার বছরের রসুল সবার ছোট। তাদের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে যুথী। সন্তানদের জন্য হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বাবা আবদুল হাকিম। আর মা নেছারন বেগমের প্রতিবন্ধী তিন সন্তানকে পরিচর্যা ও সারাক্ষণ নজরে রাখতে রাখতে নিজেও অসুস্থ পয়ে পড়েছেন। নিজেদের জীবনের ওপর দিয়ে যতই কষ্ট হোক না কেন কলিজার টুকরো সন্তানদের জন্য তাদের যেন কোন ক্লান্তি নেই। দরিদ্র পরিবার হলেও সম্পদ বলতে যা ছিল তার প্রায় সবই শেষ। তারপরও তাদের বাবা মায়ের বিশ্বাস, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেলে তাদের বুকের ধন সন্তানরা ভালো হয়ে যাবে।
সরেজমিনে বনখির্দ্দা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ভাই আর দুই বোন বাড়ির মধ্যে যে যার মতো বসে আছে। আর মানসিক প্রতিবন্ধী বড় ভাই আলামিন বাড়ির সামনের রাস্তায় পায়চারি করছে। তারা কী বলতে চাচ্ছে তা বোঝার উপায় নেই। তেমনি চলাফেরা, আচরণ, অঙ্গ-ভঙ্গি এক একজন মানসিক প্রতিবন্ধীর মতোই। বাবা আবদুল হাকিম বলেন, ‘মানুষের কষ্টের একটা শেষ আছে, কিন্তু আমার নেই। প্রতিদিন ছেলেমেয়েদের খাবার যোগাতে বাড়ি থেকে আট কিলোমিটার বাইসাইকেলের ওপর ভর করে কালীগঞ্জ সদরে আসতে হয়। সেখানে একটি ছোট চায়ের দোকানে সারাদিন চা বিক্রি করি। দিনভর রোজগারের টাকায় চাল-ডাল কিনে আবার সেই সাইকেল চেপে রাতে বাড়ি ফিরি। পরের দিন সাতসকালে আবার রওনা দিই। এভাবে চলে আমার জীবন।’ তিনি জানান, বড় মেয়ে বিথী জন্মের পর সুস্থ ছিল। কষ্ট করে এসএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। তার দুটি সন্তানও রয়েছে। কিন্তু জামাইয়ের সঙ্গে বনিবনা না থাকায় প্রায় ৪ বছর ধরে মানসিকভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে সে। বড় ছেলে আলআমিন জন্মের পর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী। সে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। ছোট ছেলে রসুলও মানসিক প্রতিবন্ধী। সন্তানদের মধ্যে মেয়ে যুথী কিছুটা সুস্থ থাকলেও মাঝে মধ্যে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবদুল হাকিম জানান, বাবা হয়ে নিজের কাছেই মাঝে মধ্যে খারাপ লাগে। পয়সার অভাবে কলিজার টুকরো সন্তানদের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। সম্পদ বলতে যা ছিল বড় ছেলে আলামিনের পেছনে ব্যয় করে নিঃস্ব প্রায়। এখন তাদের চিকিৎসার হাল ছেড়েই দিয়েছেন। তারা বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই ধুঁকছে। মা নেছারন বেগম বলেন, ‘সন্তানদের জন্য নিজের কথা ভাবতে পারিনি। বর্তমানে ৮ সদস্যের বড় সংসার। প্রতিবন্ধী সন্তানদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ বনখির্দ্দা গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন জানান, হাকিমের পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়। চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তান প্রতিবন্ধী। অনেক কষ্টের জীবন তাদের। তিনি রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন ছুটছেন রোজগারের আশায়।