মুসলিম পারিবারিক আইনের বহুবিবাহ ধারার বৈধতা প্রশ্নে রুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পারিবারিক জীবন রক্ষার বৃহৎ স্বার্থে বহুবিবাহ আইনের বিষয়ে নীতিমালা কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে স্ত্রীদের মধ্যে সম-অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া, আইন অনুসারে বহু বিবাহের অনুমতির প্রক্রিয়া কেন অবৈধ হবে না-তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত জনস্বার্থে আনা একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন। রুলে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব এবং ধর্ম সচিবকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদেনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান, আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ এর বহুবিবাহ সংক্রান্ত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিটটি করা হয়। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ এর বহু বিবাহ সংক্রান্ত ৬ ধারায় বলা হয়েছে-
১) কোনো ব্যক্তির বিয়ে বলবৎ থাকতে তিনি সালিশি কাউন্সিলের লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন না বা অনুরূপ অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠিত কোনো বিয়ে ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেকরণ) আইনের অধীনে রেজিস্ট্রি হবে না।
২) ১ নম্বর উপধারা অনুযায়ী অনুমতির ও দরখাস্ত নির্ধারিত ফিসহ চেয়ারম্যানের কাছে নির্দিষ্ট দফতরে জমা দিতে হবে ও তাতে প্রস্তাবিত বিয়ের কারণসমূহ এবং এই বিয়ের ব্যাপারে বর্তমানে স্ত্রী অথবা স্ত্রীদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা উল্লেখ থাকবে।
৩) ২ নম্বর উপধারা অনুযায়ী দরখাস্ত জমা নেওয়ার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারীকে ও বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীদের প্রত্যেককে একজন করে প্রতিনিধি মনোনীত করতে বলবেন। এভাবে গঠন করা সালিশি কাউন্সিল প্রস্তাবিত বিয়ে প্রয়োজনীয় ও ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করলে, যুক্তিযুক্ত বলে মনে হতে পারে এমন সব শর্ত থাকলে সেই আবেদন মঞ্জুর করতে পারবেন।
৪) দরখাস্তের বিষয় নিষ্পত্তি করতে সালিশি কাউন্সিল নিষ্পত্তির কারণগুলো লিপিবদ্ধ করবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেকোনো পক্ষ নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নির্দিষ্ট দফতরে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের কাছে পুনর্বিবিবেচনার জন্য দরখাস্ত করতে পারে; তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে ও কোনো আদালতে এ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
৫) কোনো ব্যক্তি যদি সালিশি কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া অন্য বিয়ে করে তবে তাকে-
ক) বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীদের তলবি ও স্থগিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করতে হবে। সেই টাকা এরূপে পরিশোধ না করা হলে বকেয়া ভূমি রাজস্বরূপে আদায়যোগ্য হবে; এবং
খ) অভিযোগে অপরাধী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবে।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, এখানে নারীর সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। যে ইসলামিক আইন দেখিয়ে বলা হয়েছে একজন পুরুষ চারজন স্ত্রী রাখতে পারবেন, সেখানে ইসলামে বলা হয়েছে, সবার প্রতি সমানভাবে সুবিচার করতে হবে। এখানে শুধুমাত্র পিক অ্যান্ড চুজ করা যাবে না। শুধু বিয়ে করতে পারবে-ওই অংশটুকু নিলে হবে না। সবার প্রতি কীভাবে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে, তার সুযোগ রাখতে হবে। টাকা দিচ্ছে কিনা। আদৌ তার বিয়ে করার আর্থিক সঙ্গতি আছে কিনা, এগুলো দেখার সুযোগ নেই।