নারীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলা আইনের ধারা বাতিলের রিট শুনানি পিছিয়েছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নারীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের বিদ্যমান ধারা বাতিলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে করা রিটের শুনানি পিছিয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ৯ জানুয়ারি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী ও অ্যাডভোকেট মো. শাহীনুজ্জামান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। এর আগে গত ১৬ নভেম্বর এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানিতে নারীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের বিদ্যমান ধারা বাতিলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। পরে আদালত রিটের শুনানি আজ ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেন। তারই ধারাবাহিতায় আজ সেটি শুনানি হয়। এর আগে ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং নারীপক্ষ, এ তিন সংগঠনের পক্ষে এ রিট আবেদন করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের বিদ্যমান ধারায় ১৫৫ (৪) এবং ১৪৬ (৩) দুটি বিধান বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। রিটে ‘যৌন অপরাধের অভিযোগকারী নারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা’- ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের এমন বিধানসহ দুটি ধারা বাতিল চাওয়া হয়। একই সঙ্গে ১৯৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারা কেন অসাংবিধানিক ও বাতিল করা হবে না, সেই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ও ১৪৬ ধারা দুটিতে বলা আছে, একজন নারী যদি যৌন অপরাধের অভিযোগকারী হন তাহলে আদালতে তার চরিত্র এবং ইতিহাস নিয়ে তাকে প্রশ্ন ও জেরা করা যায়। অনেকদিন ধরে এগুলো বাতিলে আন্দোলন হয়েছে। এখন হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছি। রিটে ধারা দুটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা অনুসারে, কোনো লোক যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিনী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। জেরায় প্রশ্ন করা নিয়ে ১৪৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এরূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।’ এর আগে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা নারীর মানবাধিকারের বিরোধী। তাই এটি বাতিলের প্রস্তাব হয়েছে। এ উদ্যোগ নারীর মর্যাদাহানি রোধ করবে।