স্বাগত ২০২২

0

সুন্দর সাহা॥ স্বাগত ২০২২। নতুন বছরের প্রথম দিন আজ। বিগত বছরের মতো এখনো কাটেনি মহামারী। অনিশ্চয়তা চারি দিকে। জনজীবনে অস্বস্তি। দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি। নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। সুখবর নেই রাজনীতিতে। সঙ্কট রয়েছে অর্থনীতিতেও। তবুও চিরাচরিত নিয়মে এসেছে নতুন বছর। নতুন বছর মানেই নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন।
অতীতের দুঃখ, বেদনা, সংকট পেছনে ফেলে নতুন বছরে বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নতুন বছর উপলক্ষে শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি এক বাণীতে এ আশা প্রকাশ করেন। অপরদিকে ধর্মীয় উগ্রবাদসহ যেকোনও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বলেছেন, নানা ঘটনা দুর্ঘটনার কালের সাক্ষী হয়ে বছরটি বিদায় নিলো। গত বছরের ব্যর্থতা দুরে ঝেড়ে সাফল্যকে সঞ্চয় করে আগামী পথ চলার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। কাটুক বিষাদ আসুক হর্ষ। হৃত গণতন্ত্রকে উদ্ধার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সংগ্রামে সকলকে নতুনভাবে ব্রতী হতে হবে। আমাদের কর্মে নতুন বছরটি যাতে সাফল্য এবং সমৃদ্ধির বছরে পরিণত হয় সে লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।
আজ থেকে শুরু হল ইংরেজি নতুন বছর। ইংরেজি বছরের পঞ্জিকার হিসাব অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার পরপরই চারদিক কাঁপিয়ে আতশবাজির আলোয় আকাশ ঝলমল করে ওঠে। বাজির শব্দ আর আলো সবাইকে জানিয়ে দেয়, নতুন বছর এসে গেছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ও জাতির নিজস্ব পঞ্জিকা থাকলেও ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানানো এবং বরণ করার রীতি আধুনিক জীবনাচারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
গোটা পৃথিবী নতুন বছরকে বরণ করে নেবে নতুন আশা, নতুন প্রত্যাশা এবং নতুন স্বপ্ন নিয়ে। নতুন বছর সবসময় একটি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষও এ রীতিনীতির বাইরে নয়। যদিও আমরা এপ্রিলের ১৪ তারিখ বা পহেলা বৈশাখের দিন নববর্ষকে নানান আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে পালন করি। তবে আমাদের জীবনের পঞ্জিকা কিন্তু ইংরেজি হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী চলে। ফলে বাংলাদেশেও থার্টি-ফার্স্ট নাইটকে উদযাপন করে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর একটা রীতি মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে। সার্বিক বিবেচনায় ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০২২ প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা হবে, করোনা ভাইরাসের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া। বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একটা কঠিন সময় পার করেছে। করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং প্রায় ১৬ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এখনো করোনার হুমকি আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে নানাভাবে ব্যাহত করছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষা খাত। ২০২২ সালের প্রত্যাশার অন্যতম একটি হবে শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুষিয়ে একটি স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের ধারা সৃষ্টি করা। বাংলাদেশে অর্থনীতির একটি অন্যতম প্রধান শক্তির জায়গা হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প যাতে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি। সে সব ক্ষতি পুষিয়ে ২০২২ সালে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পে এবং রপ্তানি বাণিজ্যে একটা গতি সঞ্চারিত হবে- এ প্রত্যাশা থাকবে নিরন্তর। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছে। এছাড়া নতুন কোনো দেশে নতুন কোনো জনশক্তিও উল্লেখযোগ্য হারে রপ্তানি হয়নি। ফলে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে একটা বড় ধরনের ভাটা পড়েছে। ২০২২ সালের প্রত্যাশা থাকবে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নতুন করে সম্প্রসারিত হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন ধরনের লকডাউন, শাটডাউন এবং কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে এসব শ্রমজীবী মানুষ নানা ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেছে। ফলে এসব হতদরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্রতর হয়েছে। এসব মানুষ এমনিতেই চরম দারিদ্রসীমায় জীবন-যাপন করে। তাই ২০২২ সালের আরো একটি প্রত্যাশা হচ্ছে এসব শ্রমজীবী মানুষকে অতি-দরিদ্র বর্গ থেকে তুলে আনা। কেননা, সমাজের একটা গণনাযোগ্য অংশকে অতি-দরিদ্র রেখে কখনোই সমাজে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এটাই হচ্ছে উন্নয়ন অর্থনীতির নৈতিক দিক।
মানবতাবিবর্জিত কাজ বিশ্বের সুপিরিয়র রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে স্বল্পোন্নত এই দেশ এবং সর্বব্যাপী নৈতিক অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। যেখানে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তির আধিক্য, স্বস্তির পরিবর্তে একধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ। নির্মম হত্যাযজ্ঞ, যুদ্ধবিগ্রহের ভয়াবহতা, মারামারি, হানাহানি ও নৃশংসতায় কেটেছে। ঘটেছে অনেক দেশের নাগরিক জীবনের চরম নাভিশ্বাস। সমগ্র বিশ্বের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়, কর্মহীন মানুষের বেকারত্ব আর চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের নাভিশ্বাস ঘটেছে পৃথিবীময়। এ ছাড়া রাষ্ট্রতান্ত্রিক বঞ্চনা, শোষণ, নিপীড়ন এবং স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীনে ক্ষমতার অপব্যবহার পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে বহাল রয়েছে আগের মতোই। ২০২২ সালের প্রত্যাশা হচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের যেন নৈতিক উন্নয়নও হয়। দেশের শৃঙ্খলিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাষণ এবং মানবিকতা পঙ্কিল আবর্ত থেকে যেন মুক্তি পায়। পরিশেষে বলব, ২০২২ সালের প্রত্যাশার তালিকা আরো লম্বা করা যায়। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বিনিয়োগে গতি সঞ্চারিত হোক নতুন বছরে এবং রাজনীতিতে আসুক পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। যে শ্রদ্ধাবোধ থেকেই আইনের কথিত প্রাচীর ভেঙে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পথ প্রশস্ত হোক। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হোক শৃঙাখল মুক্ত। প্রতিষ্ঠিত হোক ন্যায় বিচারের পথ। ২০২২ সাল সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি-এ প্রত্যাশা নিরন্তর।