থমকে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা

0

॥সাদ্দিফ অভি॥ খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার এ কে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশিরভাগই মারমা ভাষার শিক্ষার্থী। ক্লাসে ঢুকে দেখা গেলো, বাংলা ভাষায় পাঠদান চলছে। যখনই শিক্ষক মারমা ভাষার বই বের করতে বললেন, শিক্ষার্থীরা খুব উৎসাহ নিয়ে বই বের করে পড়া শুরু করলো। নিজস্ব ভাষায় পড়ার সুযোগ পেলে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। কারণ, এটা তারা খুব ভালো করে আয়ত্ত করতে পারে। তবে করোনার কারণে এখন প্রাথমিকে বন্ধ আছে মাতৃভাষায় শিক্ষা। রুটিনে না থাকায় তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের আদলে রচনা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষার বই। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষায় দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরি-এই পাঁচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করে ২০১৭ সালে। শিশুদের আনন্দের সঙ্গে পাঠদানের জন্য বাংলা শিখন-শেখানোর উপকরণের আদলে প্রণয়ন করা হয় ৮ ধরনের শিখন-শেখানোর উপকরণ। এই উপকরণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—মাতৃভাষার বই, ছড়ায় ছড়ায় বর্ণ শেখা; বর্ণ লেখার অনুশীলনী খাতা—এসো লিখতে শিখি, বর্ণ ও সংখ্যা ফ্লাশ কার্ড, ফ্লিপ চার্ট, ১০টি গল্প বইয়ের প্যাকেজ, শিক্ষক নির্দেশিকা ইত্যাদি। স্ব স্ব নৃগোষ্ঠীর সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের উপাদান নিয়ে ছড়া, কবিতা, গল্প সংযোজন করা হয়েছে উপকরণগুলোতে। বইয়ে ছবির মাধ্যমে বর্ণমালা শেখানো, গণনা শেখার ধারণা, সাধারণ জ্ঞান (চিহ্নের মাধ্যমে হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চেনানো), পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি যুক্ত করা হয়েছে। উপকরণগুলোর অধিকাংশই নিজ নিজ মাতৃভাষায় রচিত। শুধু শিক্ষক সহায়িকার নির্দেশনাগুলোতে বাংলা ব্যবহার করা হয়েছে। উপকরণগুলোর বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিষয়বস্তু হুবহু রেখে বাংলার সাধারণ বই থেকে অনুবাদ করা হয়েছে—যেমন: বঙ্গবন্ধু সংক্রান্ত লেখা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প ও নিবন্ধ, হযরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবনী ইত্যাদি। ১০টি গল্পের বইয়ের প্যাকেজের মধ্যে চারটি বই বাংলা থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, বাকি ছয়টি যার যার সমাজ জীবনে প্রচলিত শিক্ষামূলক গল্প থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এই নানা সংকটে আছে মাতৃভাষা শিক্ষা। খাগড়াছড়ির কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে জানা যায়, শিক্ষকদের কাছে মোটামুটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ শিক্ষার্থীদের পড়ানো। কারণ অনেক শিক্ষকই নিজ নিজ ভাষায় লিখতে ও পড়তে জানেন না। তাদের লেখাপড়া পার হয়েছে বাংলা ভাষা শিখে। সে জন্য তাদের নিজেদেরও নিজ নিজ ভাষায় পড়া ও লেখার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হয়। অনেক স্কুলে আবার রয়েছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একই মাতৃভাষা ব্যবহারকারী শিক্ষকের সংখ্যার স্বল্পতা। সবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা সংকটে অনেকটা ধুঁকে ধুঁকে চলছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক সংকট

প্রত্যন্ত এলাকার এই প্রাথমিক স্কুলগুলোতে মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া যায়নি। কোনও স্কুলে ২ জনের বেশি শিক্ষক নেই, যারা মাতৃভাষা শেখাতে পারেন। অথচ শিক্ষার্থী আছে একশ’রও বেশি। এ কে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মারমা ভাষার শিক্ষার্থী আছেন ১৩২ জন, কিন্তু শিক্ষক আছেন ২ জন। সদর উপজেলার ৩৮ নম্বর লতিবান মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকমা ভাষার শিক্ষার্থী আছে ৭৪ জন এবং শিক্ষক আছেন ২ জন। এ কে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহল লাল চাকমা বলেন, ‘আমাদের এখানে শতভাগ মারমা ভাষার শিক্ষার্থী আছে। এনসিটিবি’র যে বইগুলো আছে, সেগুলো মারমা ভাষায় আছে। আমরা রেগুলার কারিকুলামের বই পড়াই, পাশপাশি সপ্তাহে একদিন মারমা ভাষার বই পড়াই।’ শিক্ষকদের মতে, মারমা ভাষায় পড়ালে শিশুরা বুঝতে পারে তাড়াতাড়ি; যেহেতু তাদের নিজস্ব ভাষা। বাংলা ভাষায় পড়ানোর পর তাদের আবার মারমা ভাষায় বুঝাতে হয়। যেমন, গরু আর ছাগল বললে একটু দেরি হয়; যদি মারমা ভাষায় ‘নোয়া’ আর ‘ছুই’ বলা হয় তাহলে সহজে বুঝতে পারে। মহল লাল বলেন, ‘আমাদের এখানে ৩ জন শিক্ষক ছিলেন, যারা মারমা ভাষায় পাঠদান করাতেন। এখন দুই জন আছেন, একজন অবসরে গেছেন। যে দুই জন এখন আছেন, তারা মোটামুটি অভিজ্ঞ। যিনি অবসরে গেছেন, উনার আগে থেকে মারমা ভাষা জানা ছিল। ভাষাগত কারণে আগে শিক্ষার্থী ঝরে পড়তো। এখন কিন্তু কমে গেছে।’ লোকবলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকারি বিধি মোতাবেক ২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। এভাবে আসলে হয় না। আমি এক রুমে দুই শ্রেণির ক্লাস নিলে অন্য এক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা হা করে বসে থাকে। অর্থাৎ আমি যদি চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস এক রুমে নেই এবং সেখানে যদি ক্লাস ফাইভের বই পড়াই, তাহলে ক্লাস ফোরের শিক্ষার্থীরা না বুঝে বসে থাকবে। আমরা যদি “ব্লক টিচিং” করি তাহলে খুব কষ্ট হয়। তাতে সময়ও বেশি লাগে। আমাদের এখানে মারমা ভাষায় শেখানোর জন্য মাত্র দুই জন শিক্ষক আছেন।’ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন

খাগড়াছড়ির এসব প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা জানান, আমাদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। স্থানীয়ভাবে জাবারাং যে প্রশিক্ষণ দেয় তাতে হয় না। এ কে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মারমা ভাষার একজন শিক্ষক জানান, আমরা যখন প্রথম প্রথম ক্লাসে যেতাম, শিক্ষার্থীরা কী বলে কিছুই বুঝতাম না। হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইশারায় দেখাতে হতো। এমন হয়েছে আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, ওটাকে তোমাদের ভাষায় কি বলে। তখন শিশুরাই আমাকে বলেছে। এভাবে আমি আগে ৯-১০ বছর চাকরি করেছি। আমি বাংলায় বললে ওরা মারমা ভাষা দিয়ে উত্তর দেয়। শিক্ষকরা জানান, আমাদের যে প্রশিক্ষণ সেটা ২ দিন কিংবা ৫ দিনের। প্রাকে ২ দিনের ট্রেনিং পেয়েছিলাম। প্রথম ট্রেনিং ছয় দিনের আর রিফ্রেশার ২ দিনের। আমরা বর্ণগুলো চিনি আগে থেকে, কিন্তু শুধু বর্ণ চিনলে তো হয় না। মাতৃভাষা হলেও আয়ত্ত করতে আমাদের সময় লাগে। আমাদের ‘কার’ চিহ্নগুলো চিনতে হয়। ওখানে আবার বানান করতে হয়। আমরা ট্রেনিংয়ের সময় বলি যে, এই কয়দিনে হবে না আরও দিতে হবে।’ ৩৮ নম্বর লতিবানমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, করোনার কারণে এখন বন্ধ আছে মাতৃভাষা শিক্ষা। কারিকুলামের চাপে এখন পড়ানো যাচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনা ও রুটিন অনুযায়ী কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমাদের আরও প্রশিক্ষণের দরকার আছে। আমরা যখন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম তখন সেটা ছিল ছয় দিনের। ছয় দিনের মধ্যে বর্ণমালা শেখা সম্ভব না। প্রশিক্ষণের সময়টা বাড়ানো হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। তার ওপর আবার শিক্ষকদের জন্য কোনও উপকরণ নেই। প্রাকের জন্য কয়েক বছর আগে টিচার্স গাইড (শিক্ষক নির্দেশিকা) করা হয়েছে, কিন্তু প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিরও এ রকম কোনও গাইডবই নেই। এই ছোট ছোট শিশুরা বাংলা ভাষা সহজে বোঝে না। আমরা যদি তাদের মাতৃভাষায় শেখাই তাহলে তারা সহজে আয়ত্ত করতে পারে।

এক গোষ্ঠীর শিক্ষক পড়ান আরেক গোষ্ঠীর শিশুদের

এ কে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্য যে দুই জন শিক্ষক আছেন, তাদের দুই জনই চাকমা জনগোষ্ঠীর। তারা শেখান মারমা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের। আবার দেখা গেছে, অন্য স্কুলে আরেক জনগোষ্ঠীর শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন ত্রিপুরা শিশুদের। প্রধান শিক্ষক মহল লাল চাকমা জানান, আমাদের শিক্ষক চাকমা জনগোষ্ঠীর, আমাদের পড়াতে হয় মারমা জনগোষ্ঠীর শিশুদের। চাকমা শিক্ষকরা তো মারমা ভাষা জানেন না। তাই তারা মারমা শিশুদের পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু উদারণ দিয়ে বুঝাতে পারেন না। আমরা শুনে শুনে মোটামুটি আয়ত্ত করতে পারি। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যখন কোনও শিক্ষককে বদলি করা হয় তখন তা খতিয়ে দেখা হয় না যে তিনি কোন জনগোষ্ঠীর এবং যেখানে বদলি করা হচ্ছে সেখানে কোন ভাষার শিক্ষার্থীরা আছে। যার কারণে এই সংকট তৈরি হয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে যদি শিক্ষক বদলি করা হয় তাহলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক দু’পক্ষই উপকৃত হতো।

মিশ্র ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণি কার্যক্রমে প্রয়োজন টেকনিক্যাল ইনোভেশন

শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নয়, সংকট আছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও। অনেক স্কুলে দেখা যায়, এক ক্লাসে দুই ভাষার মিশ্র শিক্ষার্থীরা পড়ে। মাতৃভাষার ক্লাস চলাকালে এক ভাষায় শেখানো হলে, অন্য ভাষার শিক্ষার্থীদের বসে থাকতে হয়। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় হামাচাং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ত্রিপুরাদের মাতৃভাষা ‘ককবরকে’ পাঠ দেওয়া হয়। সেই বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসেই মিশ্র ভাষার কিছু শিক্ষার্থী আছে। ত্রিপুরা ভাষার বই পড়ানোর সময় অন্যভাষী শিশুরা চুপচাপ বসে থাকে। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোরামনি বৈষ্ণব জানান, ত্রিপুরা ভাষার ক্লাস চলাকালে তারা অংশগ্রহণ করে ঠিকই, কিন্তু ত্রিপুরা শিশুদের মতো তারা লেসন বুঝতে পারে না। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা খুবই উৎফুল থাকে মাতৃভাষা শিক্ষার ক্লাসে। মাতৃভাষার কারণে তাদের স্কুলে যেতে আগ্রহ বাড়ে। বাংলা ভাষার চেয়ে মাতৃভাষা শিক্ষায় আগ্রহ তাদের বেশি। এ কে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উমাঞো মারমা’র মা ক্রাঞো মারমা জানান, তিনি তার মেয়ের কাছ থেকেই ভাষা শেখেন। নিজের ভাষায় পড়তে খুবই ভালো লাগে তার। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার কণিকা খীসার কাছে জানতে চাইলে তিনি সংকটগুলোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি। শিক্ষক ঘাটতিসহ নানা জটিলতা আছে। আমরা এগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদকে জানিয়েছি। আশা করি, তারা বিবেচনা করবে।’ ইউকে এইডের আর্থিক সহায়তায় ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে খাগড়াছড়ির স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘জাবারাং কল্যাণ সমিতি’ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার তিন উপজেলায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ মাতৃভাষা শিক্ষায় সহায়তা দিয়ে আসছে। এমজেএফ কারিকুলাম বইয়ের পাশপাশি সহায়ক বই হিসেবে তিনটি ভাষায় গল্প, ছড়ার বই প্রকাশ করে বিতরণ করেছে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক দিলেও সেটি ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। না হওয়ার কারণ হচ্ছে—শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না থাকা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মাতৃভাষায় শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকা এবং ক্লাস রুটিন ও মূল্যায়ণ প্রক্রিয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত না থাকা। সেটা দেখেই আমরা আমাদের প্রকল্পের কার্যক্রম ডিজাইন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মূলত লক্ষ্য হচ্ছে, সরকার যাতে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করতে পারে, তার উদাহরণ সৃষ্টি করা। যার কারণে আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং ক্লাস পরিচালনায় সহায়তা করছি। এর সঙ্গে আমরা বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করেছি, কারণ বেসরকারি স্কুলে আমাদের ইনোভেশনের সুযোগ রয়েছে।’ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘যে ভাষার যে শিক্ষক, পড়ানোর জন্য তাকেই দরকার। তাদের প্রশিক্ষিতও হতে হবে। প্রশিক্ষণ যদি হয় এবং সেটি যদি পিটিআই’র মাধ্যমে করা হয়, তাহলে এই মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম আলোর মুখ দেখবে। এখন ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মাতৃভাষায় পড়ানো হয়। আমরা মনে করি, এই ব্যবস্থা যেন অন্তত ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত করা হয়। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত একটি শিশু যদি মাতৃভাষায় পড়ে বাংলা মিডিয়ামের বইয়ে চলে যায়, তাহলে তো সে মাতৃভাষা ভুলে যাবে। জিনিসটা যদি অন্তত প্রাথমিকে পুরোটা পড়ানো হয়, তাহলে তারা আর ভুলবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একদিক দিয়ে মাতৃভাষা শিক্ষার কনসেপ্ট বাস্তবায়ন করছি এবং অন্য দিক দিয়ে সরকারকে বলছি, এই বিষয়টি এভাবে পরিচালনা করার জন্য। মাতৃভাষা শিক্ষা টেকসই করতে হলে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’