যশোরে বিএনপির গণসমাবেশে জনসমুদ্র: গণআন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করা হবে বেগম খালেদা জিয়াকে : মির্জা আব্বাস

0

আকরামুজ্জামান ও মাসুদ রানা বাবু ॥ গতকাল যশোরে স্মরণকালের বৃহৎ এক সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী মীর্জা আব্বাস বলেছেন, গণআন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে ছাড়বোই ইনশাআল্লাহ। যশোর থেকে বাধার ব্যারিকেড ভাঙা শুরু হয়ে গেলো। তরিকুল ইসলামের যশোর থেকেই যে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে তা দেশব্যাপী বেগবান করেই এ সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে আর কোনও নির্বাচন করবে না বিএনপি। সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নয়, হুদামার্কা ছাগল খোঁজা হচ্ছে। তাই একদলীয় নির্বাচন এদেশের সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না;বিএনপি সেই নির্বাচন প্রতিহত করবে।


মির্জা আব্বাস বলেন, বাধা পেরিয়ে মানুষ বের হতে শুরু হয়েছে। তা প্রমাণ করেছে যশোরে শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও অমিতের সৈনিকেরা। সরকারের পেটোয়া বাহিনীর সকল বাধা উপেক্ষা করে মাঠ দখলে নিয়ে গণসমাবেশ সফল করেছে। তরিকুল ইসলামের যশোর থেকেই ব্যারিকেড ভাঙা শুরু হয়ে গেছে।

বুধবার বিকালে যশোরের টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে জেলা বিএনপি আয়োজিত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। গতকাল ভোর থেকে পুলিশের নানা ধরনের বাধা উপেক্ষা করে যশোরের সকল ইউনিয়ন ও আশেপাশের জেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এ গণসমাবেশ পরিণত হয়েছিল মহাসমাবেশে।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আলহাজ মো. মশিউর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা আব্বাস আরও বলেন, তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজা দেওয়া হলেও সেই টাকা কিন্তু সোনালী ব্যাংকে এখন ফুলে ফেঁপে ৮ কোটি টাকা হয়েছে। আসলে দেশনেত্রীকে আটকে রাখতেই এই সরকার অপকৌশল নিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার মনে করে, তিনি (বেগম জিয়া) বাইরে থাকলে তাদের সমূহ বিপদ। তিনি বলেন, একজন মানুষের চিকিৎসার জন্য সারাদেশের মানুষ আন্দোলন করে এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। পৃথিবীর কোথাও এমন নজীর নেই যে, চিকিৎসার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়। অথচ এ ফ্যাসিবাদি সরকার এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য সরকারকে জুলুমবাজ আখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা সভা-সমাবেশে এই সরকারকে খুন-গুম-লুণ্ঠনের সরকার বলেছি; আজ সারাবিশ্ব সেটি জেনেছে। এই সরকারের প্রধান সেনাপতি আব্দুল আজিজের দুই ভাই কুখ্যাত সন্ত্রাসী জোসেফ ও হারেজকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠালেও অসুস্থ একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সুচিকিৎসা নিতে বাধা দিচ্ছে। সারাবিশ্ব আজ এই সরকারকে চিনে ফেলেছে; সেকারণে তাদের আর্মি অফিসার, পুলিশ অফিসার, র‌্যাব অফিসারসহ দলের শীর্ষ কয়েক নেতার ভিসা বাতিল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমার যশোরে আসা স্বার্থক হয়েছে। সারাদেশে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে কানে খবর আসছিলো। যশোরে এসে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো। গতকাল অনুমতি দেয়নি, পুলিশ মাইক দিতে নিষেধ করেছে। তারপরও তরিকুল ইসলামের যোগ্য উত্তসূরী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে খুব ভোরেই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মাঠ দখল করা হয়েছে। তিনি বলেন, তরিকুল ইসলামের যশোর থেকেই ব্যারিকেড ভাঙা শুরু হয়ে গেলো। যশোর থেকেই প্রতিরোধ শুরু হলো। এখন থেকে এ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধের মাধ্যমে আন্দোলনে রাজপথ প্রকম্পিত করতে হবে। মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছি। অথচ সেই দেশ আজ মাফিয়া, লুটেরাদের কবলে চলে যাবে তা মেনে নেয়া যায় না। এ সরকার যে অপকর্ম করেছে তার বিষয়ে আজ বিশ্ব সোচ্চার হতে শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে সরকার দাঁড়াতে পারবেনা ভেবে তাকে আটক রেখে মেরে ফেলতে চায়।


গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্যে আইনগত কোনও বাধা নেই- আইনমন্ত্রী আমাদের এই কথা বললেও তারা সেই ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেননি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেউই মুক্তিযুদ্ধ করেননি; এমনকি ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে তাদের কেউ নেই। কেননা যুদ্ধ শুরু হলে তারা সব পালিয়ে ভারতে চলে যায়। সেই সময় মেজর জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষণায় দেননি, সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, আজকের এই মহাসমাবেশ যাতে না হতে পারে, সেকারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পেটোয়া বাহিনি দিয়ে যশোরের সব যানবাহন এমনকি রিকশাও বন্ধ করে দিয়েছে। তার প্রশাসন শহরের সব মাইকের দোকান, ডেকোরেশনের দোকান গতকাল রাতেই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু শহিদ জিয়ার সৈনিকরা, খালেদার জিয়ার সৈনিকরা- সেইসব বাধা উপেক্ষা করে ২০ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এই মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছে। অমিতের (অনিন্দ্য ইসলাম অমিত) সাহস ও দৃঢ়তার কারণে সমাবেশ পরিপূর্ণভাবে সফল হয়েছে। তিনি যশোরকে বাধা অতিক্রম করার জেলা আখ্যা দিয়ে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের সোপান এখান থেকেই শুরু হলো।


গণসমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিশেষ অতিথি আলহাজ মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার ভেতরে কোনও মানবিকতা নেই। আপনি চাইছেন বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে সারাজীবন ক্ষমতায় থাকতে। কিন্তু আপনার সে আশা কোনোদিন পূরণ হবে না। তিনি বলেন, এই সরকার গত দশ বছরে যে টাকা পাচার করেছে, তা দিয়ে ১০টি পদ্মা ব্রিজ হয়ে যায়। সারাবিশ্ব আজ জেনে গেছে এই সরকার একটা ফ্যাসিস্ট সরকার।


গণসমাবেশে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, যশোর বাঁধা মানে না, মায়ের মুক্তির জন্য প্রশাসনের অনুমতির তোয়াক্কা করে না। সকল প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলতে পারে। কারণ এই যশোর তরিকুল ইসলামের যশোর, বেগম খালেদা জিয়া, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের যশোর। আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম আমরা কোনো বাধা মানবো না। কারণ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি এক সুঁতোয় গাঁথা। আমরা বলেছিলাম যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে, স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে তারা যেকোন পরিস্থিতিতে এ সমাবেশ করবেই। তার প্রমাণ দিয়েছে এ জেলার নেতাকর্মীরা। শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা যে তাদের প্রিয় নেত্রীর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত তা আজকের এই বিশাল উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে। জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেন, যশোরের মানুষ এ সরকারের সকল অবৈধ ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেছে। এখন থেকে লড়াই শুরু হয়ে গেলো। এ সরকারের যতক্ষণ না পর্যন্ত পতন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদেরকে লড়াই করে যেতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। আমরা আন্দোলন করে আমাদের প্রিয় নেত্রীকে মুক্ত করবোই।

গণসমাবেশে সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, আমরা গর্বিত সম্মানিত এই যে শত প্রতিকূলতা বাধা উপেক্ষা করে জনতা এ গণসমাবেশ সফল করেছে। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী জেলার নেতাকর্মীরা আমাদেরকে নানা প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, এই গণসমাবেশ প্রমাণ করেছে যশোর জাতীয়তাবাদী দলের ঘাটি। এ জেলার মানুষ শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে কত ভালোবাসে। আগামী দিনে গণআন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রীকে মুক্ত করে ছাড়বোই ইনশাআল্লাহ।


সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক সংসদ সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব, আবুল হোসেন আজাদ, সাবিরা ইসলাম মুন্নী, কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, যশোর নগর বিএনপির আহবায়ক মারুফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. নুরুন্নবী, যুগ্ম আহবায়ক কাজী আজম, বিএনপি নেতা সেলিম রেজা আউলিয়ার, অ্যাড. শহীদ ইকবাল, মোর্ত্তজা এলাহী টিপু, খাইরুজ্জামান মধু, গোলাম হায়দার ডাবলু,

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম বনি ও আলী আকবর চুন্নু, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন, জেলা যুবদলের সভাপতি এম. তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, জেলা ছাত্রদল সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পী, জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, মহিলাদলের নেত্রী রাশিদা রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ গফুর, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা আনোয়ারুল কবীর নান্টু প্রমুখ। গণসমাবেশে যশোরের ৮ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী খুলনা মহানগর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া জেলাসহ আশপাশের সকল জেলার নেতাসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু।