পুলিশের নানা বাধা উপেক্ষা করে গণসমাবেশ রূপ নিল মহাসমাবেশে

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর টাউন হল মাঠে জেলা বিএনপির গণসমাবেশ পরিণত হয় মহাসমাবেশে। পুলিশের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সফল এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় জনসমুদ্রের এ সমাবেশ। দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে সেটি মহাসমাবেশে পরিণত হয়। এর মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তারা সর্বোচ্চ আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।  এর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জেলা নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরসমূকে গণসমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। তাদের সাথে একধিকবার দেখাও করেন। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি না দিয়ে পাল্টা গণসমাবেশ ঠেকাতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এ অবস্থায় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেন। শেষ পর্যন্ত তার দৃঢ়তায় গণসমাবেশটি সফল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং ব্যাপক জনতার উপস্থিতিতে মহাসমাবেশে রূপ নেয়।
শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে সকাল ৮টা ৩৯ মিনিটে সর্বপ্রথম অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সাথে নিয়ে মিছিল সহকারে টাউন হল মাঠে গণসমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে মঞ্চ প্রস্তুত করেন। মুহূর্তের মধ্যে অগোছালো যশোর টাউন হল মাঠে গণসমাবেশের জন্য প্রস্তুত করা হয়। গতকাল বুধবার জেলা বিএনপির এই গণসমাবেশ ঠেকাতে সূর্যোদ্বয়ের আগেই প্রশাসন যশোর শহরে প্রবেশের সকল রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। চাঁচড়া চেকপোস্ট, মুড়লি, রাজারহাট মোড়, মনিহার, খাজুরা, বাসস্ট্যান্ড. পালবাড়ী, ধর্মতলা মোড়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়। এছাড়া যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা বাজার, থানার মোড়, নাভারণ মোড়, শার্শা থানা মোড়, বেনাপোল বাসস্ট্যান্ড, নাভারণ-সাতক্ষীরা সড়কের বাগআঁচড়া, সাতমাইল বাঁকড়া বাজার, রাজগঞ্জ সড়কের রাজগঞ্জ বাজার, খেদাপাড়া বাজার, ভান্ডারি মোড়, পলাশি কলেজ মোড়, ঝিনাইদহ মহাসড়কের চুড়ামনকাঠি, বারীনগর বাজার, চুড়ামনকাটি, চৌগাছা সড়কের চৌগাছা বাজার, সিংহঝুলি বাজার ব্যারিডেক দেয়। এমনিভাবে খুলনা মহাসড়ক, মাগুরা মহাসড়ক, নড়াইল সড়কের বহু স্থানে ব্যারিকেড দেয়া হয়। প্রশাসন কেবল ব্যারিকেড দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়।এতো বাধা বিপত্তি ঠেকাতে পারেনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের। ২০/২৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে মিছিলসহকারে গণসমাবেশে যোগ দেন। চৌগাছা উপজেলা সদর থেকে টাউন হল মযদান পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সমাবেশে আসেন উপজেলার নেতা-কর্মীরা। পুলিশের বাধা পেয়ে অন্যান্য এলাকার লোকজনও পায়ে হেঁটে সমাবেশে যোগ দেন। বেলা দুইটায় সমাবেশ আহ্বান করা হলেও সকাল থেকেই মিছিল আসা শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। এক পর্যায়ে যশোর টাউন হল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, ন্যায়-বিচার চাই, এমন লেখা সম্বলিত ব্যানার প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ছিল জনতার হাতে। বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে কেবলমাত্র পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি। সমাবেশে কোন মাইক বা ডেকোরেটরের মালামাল যাতে ব্যবহৃত হতে না পারে সে জন্যে গণসমাবেশের আগের দুই রাতে সংশ্লিষ্টদের থানায় ডেকে নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। এমনকি, টাউন হল মাঠে মাইকসহ অন্য কিছু গেলে অফেরতযোগ্য বলে হুঁশিয়ার দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি ও যুবদলের নেতারা। একাধিক মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলেও বিষয়টি জানা যায়।
এদিকে, যশোরে মাইক না পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও মাগুরা থেকে মাইক এনে ব্যবহার করা হয়। সমাবেশস্থলের চেয়ারও আনা হয় অন্য স্থান থেকে। এভাবে প্রশাসনের বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে বিএনপির গণসমাবেশ সফল এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।