বৃষ্টিতে সর্বশান্ত হয়ে পড়া চৌগাছার কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপণ চেষ্টা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ চলতি মাসের প্রথম দিকে একটানা বৃষ্টিতে চৌগাছার কৃষদের স্বপ্ন ওই বৃষ্টির পানিতে যেন ভেসে গেছে। বিঘার পর বিঘা জমির ফসল পানিতে পচে গলে নষ্ট হয়েছে। যা অবশিষ্ঠ আছে সে গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা ক্ষেতে দিনরাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্থ্য চাষিদের তালিকা করে দ্রুত আর্থিক সহযোগীতা প্রদানের দাবি করেছেন ভুক্ষভোগীসহ সচেতন মহল।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে’র প্রভাবে চলতি মাসের ৫ তারিখ হতে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছাতে টানা তিন দিন অবিরাম বৃষ্টি হয়। একটানা বৃষ্টিতে এ জনপদের শতশত কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পুশিয়ে উঠা সম্ভব না বলে জানান চাষিরা। বোরো বীজতলা থেকে শুরু করে রোপা আপন, সবজি, মসুর, পেয়াজ, ঝাল একথায় উঠতি সব ধরনের ফসের ক্ষতি হয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু জমির ফসল পানিবদ্ধ হয়ে পচে গলে নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টি থামার পর রোদে অনেক ফসল মারা গেছে। যেসব ফসল রোদ আর বৃষ্টির সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে সেই ফসল রক্ষায় কৃষক মাঠে নিদারুন কষ্ট করে যাচ্ছেন। তারা আবরও স্বপ্ন দেখছেন যে ফসলটি বেঁচে আছে তা বিক্রি করে কিছুটা হলেও কষ্ট দুর করবেন।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতে উপজেলাতে ১৩শ ৭৫ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে বোরো বীজতলা ৩০ হেক্টর, সবজি ২০০ হেক্টর, রোপা আমন ধান ৫শ ৩০ হেক্টর এবং অন্যান্য ফসল যেমন বাঁধাকপি, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, মসুর, সরিষা, ধনিয়া, মিষ্টি আলু, পটলসহ অন্যান্য ফসল ৬শ ১৫ হেক্টর।
গতকাল উপজেলার খড়িঞ্চা, বেলেমাঠ, ইছাপুর, পাঁচনামনা গ্রাম এলাকার মাঠে যেয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি ও রোদকে উপেক্ষা করে যে সব ফসল আজও বোঁচে আছে তা রক্ষায় চাষিরা জমিতে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আবার নষ্ট হওয়া ফসলের ক্ষেত নতুন কোন ফসল উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করছেন। এ সময় কথা হয় পাঁচনামনা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, প্রায় ১ বিঘা জমিতে তিনি মসুর চাষ করেন। বৃষ্টিতে সুমদয় মসুর পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক দিনের রোদে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় পুনরায় মসুর চাষ করেছেন। ওই মাঠেই তিনি ১০ কাটা জমিতে বাঁধা কপির চাষ করেন। বৃষ্টির পানিতে কপির অপুরোনীয় ক্ষতি হয়। পানি আর রোদের সাথে লড়াই করে যা জীবিত আছে সে সকল গাছ নানা ধরনের ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে। সকাল বিকেল জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করে তা সতেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একই গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, ১০ কাটা জমিতে তিনি মসুর চাষ করেন, কিন্তু বৃষ্টিতে মসুর নষ্ট হয়ে গেছে। ওই জমিতে তিনি পাট চাষের অপেক্ষায় আছেন। কৃষক চান্দু মিয়া বলেন, বোরাধান রোপনের জন্য ১ মন (৪০ কেজি) ধানের পাতো দিয়েছিলেন। বৃষ্টিতে সমুদয় বীজতলা নষ্ট। এছাড়া ১ বিঘা জমিতে তিনি মসুর চাষ করেন, সেটিও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ওই জমিতে তিনি বর্তমানে ভাতি পেঁয়াজ চাষ করবেন বলে মনস্থির করেছেন। ইছাপুর গ্রামের চাষি সামছুল বিশ্বাস বলেন, ২ বিঘা জমিতে বাঁধা কপির চাষ ছিল। বৃষ্টিতে অধিকাংশ কপির চারা মারা গেছে। যে সব চারা বোঁচে আছে তা রক্ষায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। কৃষক চান্দু, রফিকুল ইসলাম, সামছুল বিশ্বাসের মত গোটা উপজেলার শতশত কৃষক চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। প্রতিটি কৃষকের কোন না কোন ফসল টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। অনেক পরিবারে আজও চলছে বোবা কান্না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কৃষক বলেন, ধারদেনা করে কাঁচা মরিচের চাষ করেছিলাম, কিন্তু সর্বনাশা বৃষ্টিতে তার সব জমির কাঁচামরিচের গাছ মারা গেছে। দোকান বাকিসহ অনেক জায়গায় বাকি পড়ে গেছে, হালখাতার চিঠি আসছে লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছিনা। ভুক্তভোগী চাষিসহ উপজেলার সচেতন মহল ক্ষতিগ্রস্থ্য চাষিদের পাশে দাঁড়াতে সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস জানান, ক্ষতিগ্রস্থ্য চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদি ক্ষতিগ্রস্থ্যরা প্রনোদনা পাবেন।