১৩ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ১২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৪ হাজার ৭২০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার ৬২৭ কোটি ৪ লাখ টাকা।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ার (দরপত্র) মাধ্যমে গ্যাস ওয়েল (ডিজেল), জেট এ-১ (এভিয়েশন ফুয়েল), ফার্নেস ওয়েল (৯৮০ সিএসটি), মোগ্যাস (অকটেন) এবং মেরিন ফুয়েল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস অয়েল ১০ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, জেট এ-১ ওয়েল ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল ৪০ হাজার মেট্রিক টন, মোগ্যাস ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার সুপারিশ অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেল দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করে থাকে। জ্বালানি তেলের সরবরাহ উৎস বহুমুখীকরণ, সরবরাহ লাইন-আপ সর্বোচ্চ নিশ্চিত করা এবং প্রতিযোগিতামূলক দর পাওয়ার লক্ষ্যে আমদানিতব্য জ্বালানি তেলের পরিমাণকে পাঁচটি প্যাকেজে বিভক্ত করে ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হয়।
সূত্র জানায়, কোটেশন বিজ্ঞপ্তি ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর প্রকাশের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিপিসি’র চট্টগ্রামস্থ প্রধান কার্যালয় এবং ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিস থেকে আটটি দরপত্র দলিল বিক্রয় হয়। চাহিদার বিপরীতে আমদানিতব্য পরিমাণের ফ্লেক্সিবিলিটি বিবেচনা করে কোটেশন প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ গ্যাস অয়েল (ডিজেল) আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা বিবেচনা করে পণ্যের দাম (প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিবেচনা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাতটি প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব প্রাথমিক মূল্যায়নে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেজ ‘এ’তে ৪টি, প্যাকেজ ‘বি’তে ৭টি, প্যাকেজ ‘সি’তে ৪টি, প্যাকেজ ‘ডি’তে ৫টি এবং প্যাকেজ ‘ই’তে ৬টি প্রস্তাব দাখিল করে। গ্রহণযোগ্য সাতটি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজভিত্তিক প্রাপ্ত দরপ্রস্তাবগুলোর তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। প্রাপ্ত দরপ্রস্তাবের সঙ্গে টেন্ডার সিকিউরিটি হিসেবে সাতটি প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা বিডবন্ডের সঠিকতা বিপিসি নিশ্চিত করে। দরপ্রস্তাবের বৈধতার মেয়াদ ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ আছে।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির দ্বিতীয় সভায় কোটেশনের কারিগরি ও আর্থিক বিষয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। প্রস্তবিত প্রিমিয়াম তথা নিরুপিত ওয়েট অ্যাভারেজের ভিত্তিতে প্যাকেজ ‘এ’ তে পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড, প্যাকেজ ‘বি’তে ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, প্যাকেজ ‘সি’ ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর, প্র্যাকেজ ‘ডি’ ও ‘ই’ তে ইউনিপেগ সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডকে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত ও কৃতকার্য দরদাতা হিসেবে পাঁচটি প্যাকেজে (প্রিমিয়াম+রেফান্সে প্রাইস অনুযায়ী) ৮৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৪ হাজার ৭২০ মার্কিন ডলারের দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে।
জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক দর বিবেচনায় গ্যাস ওয়েল (ডিজেল) প্রতি ব্যরেলের দাম ৩.১০ মার্কিন ডলার, জেট এ-১ (এভিয়েশন ফুয়েল) প্রতি ব্যারেলের দাম ৪.২৪ মার্কিন ডলার, ফার্নেস ওয়েল ২৮.৬৫ মার্কিন ডলার, মোগ্যাস (অকটেন) প্রতি ব্যারেলের দাম ৫.৫৮ মার্কিন ডলার এবং মেরিন ফুয়েল প্রতি ব্যারেলের দাম ৩৫.৩৩ মার্কিন ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রিমিয়ামের মধ্যে সাধারণত জাহাজ ভাড়া, ইন্সুরেন্স, বাঙ্কার মূল্য, এল/সি কনফার্মেশন চার্জ, লাইটারেজ খরচ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। সামগ্রিক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গ্যাস অয়েল, জেট এ-১, মোগ্যাস ও ফার্নেস অয়েলের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত প্রিমিয়াম প্রাক্কলনের তুলনায় কম। তবে মেরিন ফুয়েলের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দর প্রাক্কলিত প্রিমিয়ামের তুলনায় কিছুটা বেশি। সামগ্রিকভাবে প্রাপ্ত দর বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনায় প্রতিযোগিতামূলক বলে মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে।