উপকূলে উন্নয়ন তরান্বিত করুন

0

অনেক আতঙ্কের জন্ম দিয়ে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ উপকূলে আঘাত হানার আগেই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। তাতে ঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছে উপকূলের মানুষ। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়নি। টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। খুলনার কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি। টানা বৃষ্টিতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরায় ২০ শতাংশ জমির আমন ধান ডুবে গেছে। যশোরেও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সরিষা, পেঁয়াজ, আলু, রসুনসহ শীতকালীন ফসলও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসময়ে এত বেশি বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের লবণ চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
উপকূলীয় জনজীবন, বিশেষ করে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের মানুষ আজ অস্তিত্ব সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের হানা উপকূলের বিপর্যস্ত জনজীবনকে নতুন করে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ও তীব্রতা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকবে। এতে উপকূলের জনজীবন আরো বেশি সংকটে পড়বে এবং তারা বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। অথচ, এমন অস্তিত্ব সংকটের মুখে থাকা উপকূলবাসীকে রক্ষায় আমাদের উদ্যোগ খুবই কম। ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি যেসব সুপারিশ করেছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল উপকূল রক্ষা বাঁধ আরো উঁচু ও প্রশস্ত করা, নির্দিষ্ট ঘনত্ব অনুযায়ী আশ্রয়শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো, গবাদি পশু রক্ষায় উঁচু টিলা নির্মাণ ইত্যাদি। তারপর সরকার পরিবর্তনে দীর্ঘ সময় কেটে গেছে, সেই কাজগুলো আমরা আজও সঠিকভাবে করতে পারিনি। সিডর, আইলাসহ বিভিন্ন সময়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর দাপটে বেড়িবাঁধের যে ক্ষতি হয়েছিল তার সংস্কারও ঠিকমতো করা যায়নি। অনেক স্থানে ছোটখাটো দুর্যোগেও ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যায়। সম্প্রতিকালে সরকার উপকূল রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত ধীর। জানা যায়, বরগুনা জেলায় দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য। ঢিমেতালে সেই কাজ এখনো চলছে। কবে শেষ হবে কেউ জানে না। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ মেরামতের আরো আটটি প্রকল্পেরও প্রায় একই অবস্থা। সাড়ে তিন বছর মেয়াদের ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ ডিসেম্বর। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ছিল ১ শতাংশের মতো, যদিও মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে অগ্রগতি ১০.৯ শতাংশ বলা হয়েছিল। এসব কারণে উপকূলবাসীর জীবন ক্রমেই আরো ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। অস্তিত্বের সংকট আরো প্রবল হচ্ছে। আমরা মনে করি, উপকূলের কয়েক কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। একই সাথে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া জরুরি। তবে, সবার আগে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কৃষকদের সহায়তায় প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।