যান্ত্রিক সরঞ্জাম পরিদপ্তরের ২৯০ পদই শূন্য

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক সরঞ্জাম পরিদপ্তর ১৯৮৪ সালে অনুমোদিত জনবল ২ হাজার ১৮৪ জন থাকলেও ১৯৯৮ সালে পরিদপ্তরটির পুনর্গঠন অনুযায়ী অনুমোদিত জনবল কমে ২০১৭ সালে ৩৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ৩৭৬টি পদের মধ্যে ৮৬ জন কর্মরত। বাকি ২৯০টি পদই শূন্য। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে যান্ত্রিক সরঞ্জাম পরিদপ্তদেরর প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল ওয়াহাব পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান। তিনি উল্লেখ করেন, শূন্যপদে নিয়োগ ও পদায়ন অত্যন্ত জরুরি। পরিদপ্তরের অবকাঠামো ও ওয়ার্কশপগুলো প্রায় ৬০ বছরের পুরনো হওয়ায় অনেকগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, এ পরিদপ্তরটি ১৯৬১ সালে স্থাপিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট যান্ত্রিক সরঞ্জাম পরিদপ্তরের ভারী সরঞ্জামাদি দিয়ে তৈরি করতে শুরু করেন। যান্ত্রিক সরঞ্জাম পরিদপ্তরটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) সব পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর গেইট ও হোয়েস্টিং সিস্টেম তৈরি স্থাপন এবং সরঞ্জাম দ্বারা ছোট নদী-নালা, খাল-বিল খনন কাজ করে আসছে। খুলনা, গোয়ালপাড়া ১১০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট, ঘোড়াশাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন ও কাপ্তাই হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টের স্পিলওয়ে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য ৬২৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক সরঞ্জাম (এমই) পরিদপ্তর আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। পরিদপ্তরটির সক্ষমতা বাড়াতে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির অনুমোদন প্রয়োজন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দপ্তরগুলো অধিদপ্তর না হওয়ায় কর্মকর্তারা চাকরি ছেড়ে চলে যান। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বাপাউবোকে অধিদপ্তর করার প্রস্তাব দেওয়া হলে এটি ফেরত দেওয়া হয়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি থেকে একটি সুপারিশ করলে পুনরায় প্রস্তাবটি পাঠানো যায়। কমিটির সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী এমপি বলেন, যান্ত্রিক সরঞ্জাম পরিদপ্তরের জন্য আধুনিক যান্ত্রিক সরঞ্জামাদি কিনে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। জনবল না থাকলে যন্ত্র চালানো সম্ভব হবে না। হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডে বর্ষা মৌসুমের আগেই জনবল নিয়োগ দেওয়া উচিত। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের কাজের পরিধি ও দক্ষতা অধিক। কিন্তু দুটিতেই কর্মকর্তারা নন-ক্যাডার হওয়ায় থাকতে চান না। বিসিএস ক্যাডার হয়ে অন্য দপ্তরে চলে যান। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড বিসিএস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন এবং পাউবোকে অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করার সুপারিশ করেন। উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, অন্যান্য দপ্তরের তুলনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তাদের বেশি পরিশ্রম করতে হয়। দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে রাতদিন সবসময় কাজ করতে হয়। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অধিদপ্তরে রূপান্তরের সুপারিশ করার অনুরোধ জানান।
জাতীয় সংসদ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ি উপজেলাধীন ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বর্তমান অবস্থার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। কমিটি নদীর গতিপথ আঁকাবাঁকা না রেখে সোজা করার সুপারিশ করে। কমিটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত প্রকল্পগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন বই আকারে প্রকাশের সুপারিশ করে। বৈঠকে কুমিল্লা জেলার পুরাতন ডাকাতিয়া-নতুন ডাকাতিয়া নদী সেচ ও নিষ্কাশন প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন পেশ ও সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। কমিটি জমি ব্যবহার উপযোগী করে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ পূর্বক বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও নুরুন্নবী চৌধুরী অংশ নেন। বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।