আজ ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস

0

রিফাত রহমান,চুয়াডাঙ্গা॥ আজ ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা চুয়াডাঙ্গা জেলা পাকহানাদার মুক্ত হয়। এ দিন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর তুমুল প্রতিরোধের মুখে পাকহানাদার বাহিনী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা অভিমুখে পালিয়ে যায়। হানাদারমুক্ত হয় চুয়াডাঙ্গা।
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর জেলার জীবননগর শহরে পাকহানাদার বাহিনীর পতন ঘটলেও চুড়ান্ত বিজয় আসে ৪ ডিসেম্বর। এদিন সকালে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মেজর দত্ত ও বর্ম্মা এবং ৮ নম্বর সেক্টরের ভারতের বানপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে জীবননগরের ধোপাখালী সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে প্রবেশ করে।

তারা চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, দত্তনগর, হাসাদহ সন্তোষপুর,রাজাপুর, ধোপাখালী ও মাধবখালীতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর উপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এ সময় রাজাপুর ও মাধবখালী সীমান্তে সন্মুখ সমরে শাহাদৎ বরণ করেন হাবিলদার আব্দুল গফুর, নায়েক আব্দুল মালেক, আব্দুর রশিদ, সিপাহী সিদ্দিক আলী, আব্দুল আজিজ ও আবু বকর। যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যায়। এ সময় জীবননগর থানায় ফেলে যাওয়া পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন নারী ধর্ষণকারী ও অমানুষিক নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত মুনছুর আলীর ব্যবহƒত জিপ গাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আগুন ধরিয়ে দেয়। থানার মালখানা থেকে উদ্ধার করা হয় পাশবিক নির্যাতনের পর সদ্য হত্যা করা ৭/৮ জন অজ্ঞাত পরিচয় যুবতীর লাশ। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও দামুড়হুদা অঞ্চল দিয়ে পাকবাহিনীর উপর গেরিলা আক্রমণ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী। এর ফলে চুয়াডাঙ্গা পুরোপুরি শত্রু মুক্ত হওয়ার পথ সুগম হয়।এরপর ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গা শহরমুখী মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ব্রিজের একাংশ শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয়। যাতে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অনুসরণ করতে না পারে। ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গা শহর ও আলমডাঙ্গা অতিক্রম করে কুষ্টিয়ার দিকে চলে যায়।
এরপর ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুরোপুরি শত্রু মুক্ত হয়। এ দিন স্বতঃস্ফুর্ত মুক্তিপাগল মুক্তিযোদ্ধারা চুয়াডাঙ্গার মাটিতে প্রথম লাল-সবুজ খোচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। শুরু হয় প্রশাসনিক কর্মকান্ড। মোস্তফা আনোয়ারকে মহকুমা প্রশাসক করে এখানে বেসামরিক প্রশাসন চালু করা হয়। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গাকে মুক্ত করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মহান মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার অবদান অবিস্মরণীয়। প্রথম রাজধানী হিসেবে নির্ধারিত হয় চুয়াডাঙ্গা। তারিখও নির্ধারিত হয় এপ্রিলের ১০। খবরটি আগেভাগেই জানাজানি হয়ে যাওয়ার ফলে কৌশলগত কারনে ১৭এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় প্রথম রাজধানী হয় এবং প্রবাসী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গায় মোট মুক্তিযোদ্ধা ১ হাজার ৬৩১ জন। এর মধ্যে যুদ্ধাহত ১৫৬ জন। এ রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছেন ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। চুয়াডাঙ্গায় দু’জন বীর প্রতীকও রয়েছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার এসব সূর্য সন্তানদের সাহসী মোকাবেলা চুয়াডাঙ্গাকে করেছে মহিমান্বিত। এ কারনে জাতীয় গৌরবের প্রেক্ষাপটে চুয়াডাঙ্গার নন্দিত অবস্থান ইতিহাসে স্বীকৃত। এদিকে এদিনটি উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নেতৃত্বে দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদহ গ্রামে সম্মুখ সমরের যোদ্ধা শহীদ ৮ মুক্তিযোদ্ধার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক-১ মুন্সী আলমগীর হান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক-২ মাসুদউজ্জামান লিটু, দামুড়হুদা উপজেলা শাখার সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু প্রমূখ। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এদিন দুপুরের পর স্থানীয় শহীদ হাসান চত্বরে শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম এবং পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক প্রমূখ।