শার্শায় প্রেমিককে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় নারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের শার্শায় পেট্রোল ঢেলে প্রেমিককে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় বিথি খাতুন (৩৩) নামে এক নারীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শার্শা থানা পুলিশের এসআই মোস্তাফিজুর রহমান এই চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযুক্ত বিথি খাতুন শার্শা উপজেলার কাজীরবেড় গ্রামের জনৈক সিরাজুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাইদুর রহমানের স্ত্রী। তার আসল বাড়ি ঝিনাইদহ সদরের খানকুলা গ্রামে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর (রাজগঞ্জ) গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনি রাজগঞ্জ বাজারে লোকাল বাসের কলারম্যান হিসেবে কাজ করতেন। অপরদিকে অভিযুক্ত বিথি খাতুনের স্বামী সাইদুর রহমান ওয়েব ফাউন্ডেশন এনজিও’র রাজগঞ্জ শাখায় চাকরি করার কারণে তারা সেখানে বসবাস করতেন। সেই সুবাদে বিথি খাতুনের সাথে মনিরুল ইসলামের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলতেন। পরবর্তীতে স্বামীর বদলিজনিত কারণে বিথি খাতুন তার সাথে শার্শায় চলে যান। তারা কাজীরবেড়ে ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে মনিরুল ইসলাম জরুরি কাজ আছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তিনি পরিবারের লোকজনকে জানান যে, রাতে বাড়ি ফিরবেন না। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের কাছ থেকে মনিরুল ইসলামের পিতা আবুল হোসেন খবর পান, তার ছেলের লাশ শার্শা থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। এ খবর পেয়ে আবুল হোসেন শার্শা থানায় গিয়ে তার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। পরে আবুল হোসেন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, স্বামী বাসায় না থাকার সুযোগে প্রেমিকা বিথি খাতুন তার ছেলেকে মোবাইল ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মনিরুল ইসলামকে প্রথমে অচেতন করেন বিথি খাতুন। পরে তাকে ওই অবস্থায় ঘর থেকে বের করে বাড়ির সিঁড়িতে নিয়ে আসেন এবং মোটরসাইকেল গায়ের ওপর ফেলে দেয়া হয়। এরপর মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল বের করে তার গায়ের ওপর ঢেলে দিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করেন বিথি খাতুন। এ ঘটনায় বিথি খাতুনকে আসামি কর শার্শা থানায় মামলা করেন আবুল হোসেন। পুলিশ আসামি বিথি খাতুনকে আটক করে।
মামলা তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, মনিরুল ইসলাম তাদের সম্পর্কের কথা স্বামীকে জানিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে প্রেমিকা বিথি খাতুনের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে টাকা নিতেন। বিথি খাতুন তাকে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিতেন। এক পর্যায়ে মনিরুল ইসলাম ব্যবসার কথা বলে বিথি খাতুনের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে স্বামীর কাছে তাদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়ার ভয়ও দেখান। কিন্তু টাকা দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় এবং স্বামীকে সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোবাইল ফোন করে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে মনিরুল ইসলামকে তার বাসায় আসতে বলে বিথি খাতুন। ওইদিন বিথি খাতুনের স্বামী ঝিনাইদহের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এই সুযোগে প্রেমিককে বাসায় আসতে খবর দেন বিথি খাতুন। রাত নয়টার দিকে ২ লাখ টাকা চাওয়া নিয়ে মনিরুল ইসলাম ও বিথি খাতুনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এক পর্যায়ে বিথি খাতুন পানিতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে প্রেমিককে খাইয়ে দেন। ঘুমের ওষুধের কারণে মনিরুল ইসলাম অচেতন হয়ে পড়লে বিথি খাতুন তাকে ওই অবস্থায় ঘর থেকে টানতে টানতে সিঁড়ির পাশে এনে রাখেন। এরপর সেখানে থাকা একটি বাজাজ পালসার মোটরসাইকেল শরীরের ওপর ফেলে এবং তেলের পাইপ ছিঁড়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মনিরুল ইসলামকে হত্যা করেন বিথি খাতুন।