চেক জালিয়াতি : যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিব ওএসডি # নতুন চেয়ারম্যান ড.আহসান হাবীব

0

তহীদ মনি॥ আলোচিত চেক জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়্যারম্যান প্রফেসর ড. মোল¬া আমীর হোসেন ও সচিব প্রফেসর এএইচএম আলী আর রেজাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। তারা দুই জনই শিক্ষা বোর্ডের চেক জালিয়াতি মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকেই স্বপদে থাকা নিয়ে সমালোচনা চলছিল। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. আহসান হাবীব ও সচিব পদে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের সরদার।এছাড়া চেক জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, গত ৭ অক্টোবার যশোর শিক্ষা বোর্ডের হিসাব যাচাইকালে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাতের তথ্য উদঘাটিত হয়। এরপর চারধাপে মোট সাত কোটি টাকা লোপাটের তথ্য মেলে। তদন্তে দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে এ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুদক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন ও সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালামসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আজ (মঙ্গলবার) রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন ও সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজাকে ওএসডি করা হয়েছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও তদন্ত করা হবে। তিনি আরো বলেন, ওই চিঠিতে বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড.আহসান হাবীব ও সচিব হিসেবে রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো.আব্দুল খালেক সরদারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সদ্য নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর চেষ্টা করবো কোনো দুর্নীতি হতে না দেওয়ার, অনিয়ম করতে না দেওয়ার। তাছাড়া কেউ মামলাকেও প্রভাবিত করতে না পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার চেষ্টা করবো। যশোর শিক্ষা বোর্ডকে স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা থাকবে । তিনি জানান, আগামী রবি অথবা সোমবারে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, বোর্ডের দুর্নীতির মামলাটির তদন্তভার আমার উপর দেয়া হয়েছে। আতœসাতকৃত টাকার শেষ গন্তব্যস্থল আমরা খুজে বের করব। এর সাথে জড়িত যেই হোকনা কেন কেউ রেহাই পাবেনা। গত ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষা বোর্ডে প্রথম চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে বোর্ড থেকে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। গত ১৮ অক্টোবর দুদক’র সমন্বিত যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল এ বিষয়ে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। আসামিরা হলেন শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সাবেক সচিব অধ্যাপক এএম এইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল আলমের নামে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজস, প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও হিসাবপত্র সমূহে মিথ্যা বর্ণনার মাধ্যমে সরকারি ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ১০৯/৪০৯/৪২০/৪৭৭ (ক)সহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ৫ (২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
এছাড়া বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপকর্ম উল্লেখ করে তাকে অপসারণে চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর যশোর-২ আসনের এমপি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নাসির উদ্দিন ও যশোর-৬ আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দেন। বোর্ডে দফায় দফায় ধরা পড়া চেক জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শুরু থেকে সরব ছিলেন কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ। তবে এত বড় জালিয়াতির ঘটনার প্রমাণ পাওয়ার পরও ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা মাসাধিক কাল তাদের স্বপদে থাকায় সমালোচনা সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেনের নির্দেশে বোর্ডের দুটি শাখাও বন্ধ করে চাবি নিয়ে নেওয়া হয়। গতকাল যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন যশোর পৌঁছানোর পর পদ বঞ্চিত ও দুর্নীতির প্রতিবাদকারী শিক্ষা বোর্ডের অনেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারী আনন্দ ও স্বস্তি প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, সহকারী মূল্যায়ন অফিসার রেজাউল ইসলাম, সহকারী সচিব(একাডেমিক) মাকসুদ আল হাবিব প্রমুখ।