পারিবারিক মামলায় ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নয়, ফের রায় হাইকোর্টের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পারিবারিক আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে মূল ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে অন্যকে ক্ষমতা বা দায়িত্ব অর্পণ করা তথা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দেওয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করার ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধির ১১৫ ধারা প্রয়োগ বাধা হবে না, যদিও পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে দেওয়ানি কার্যবিধির ধারা ১০ ও ১১ ব্যতীত অন্য ধারার প্রয়োগকে বারিত করা আছে। এ বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরির (আদালত বন্ধু) মতামত শুনানি নিয়ে এ-সংক্রান্ত রুল খারিজ করে মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আবদুল হাকিম, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এর আগেও ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দেওয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্টের অপর এক বেঞ্চ। আদালতে আজ বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. সাইদুল আলম খান। আর বিবাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম খালেদ আহমেদ।
পারিবারিক আদালতে করা সিলেটের এক মামলায় ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ সংক্রান্ত বিষয়ে রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ চার অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন। তারা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, অ্যাডভোকেট কামালুল আলম ও প্রবীর নিয়োগী। ওইদিন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের সময় হাইকোর্টে বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. সাইদুল আলম খান। আর বিবাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম খালেদ আহমেদ। আদেশের বিষয়ে ব্যারিস্টার মো. সাইদুল আলম খান বলেন, এ মামলার বাদী এক নারী তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে দেনমোহর ও সন্তানের ভরণপোষণের দাবিতে মামলা করেন। সে মামলায় লড়তে বিবাদী তার পক্ষে এক আত্মীয়কে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ করেন। কিন্তু ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্স-১৯৮৫ অনুযায়ী পারিবারিক মামলায় ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নেওয়ার বিধান নেই। ফলে সিলেটের পারিবারিক আদালত এই মামলার বিবাদীর ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ গ্রহণ না করে আদেশ দেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিবাদী আপিল করলে সিলেটের জেলা জজ আদালত সে আপিল খারিজ করে আদেশ দেন। তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালতের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিবাদী। এরপর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ওই রিভিশন আবেদনের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। সে শুনানিতে পারিবারিক আদালতের মামলায় দেওয়ানি কার্যবিধির ১০ ও ১১ ধারার বাইরে অন্য কোনো ধারা প্রযোজ্য হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠলে হাইকোর্টের সামনে ভিন্ন ভিন্ন রায় পরিলক্ষিত হয়। একপর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রিভিশন আবেদনটি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে পাঠান। পরে প্রধান বিচারপতি রিভিশন আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠন করেন।
সে বেঞ্চে রিভিশন আবেদনের শুনানির জন্য উঠলে হাইকোর্ট চারজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে আদালতের বন্ধু হিসেবে তাদের মতামত শুনতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন। পরবর্তী সময়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, এ এফ হাসান আরিফ, কামালুল আলম ও প্রবীর নিয়োগী এ বিষয়ে আদালতে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। এরপর আদালত আজ রায় ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। শুনানি নিয়ে রায় ঘোষণা করা হয় আজ। আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বিবাহবিচ্ছেদের পর তার সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত দাবি করে ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর একটি মামলা করেন। ওই নারীর স্বামী বিদেশে থাকায় আইনি জটিলতা তৈরি হয়। তাই মামলা চলাকালে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, সন্তানের বাবা বিদেশে থেকে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন কিনা। ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার সহকারী জজ মত দেন, উভয়পক্ষের ব্যক্তিগত উপস্থিতি জরুরি বলে মনে করি। এর বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা জজও একই মত দেন। নিম্ন আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশ সম্পর্কে ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম বলেন, পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর আওতায় মামলা কেউ প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারবে না। এই মামলার ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অ্যাক্ট প্রযোজ্য হবে না। তাই এখন থেকে পারিবারিক আদালতে মামলার ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ রীতি হিসেবেই গণ্য হবে বলে আমি মনে করি।