খুলনায় শিশু হত্যায় সৎ মা ও নড়াইলে বোন হত্যায় ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ খুলনায় শিশু কন্যা হত্যায় সৎ মা ও নড়াইলে বোন হত্যায় ভাইকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে দুই জেলার আদালত।
স্টাফ রিপোর্টার,খুলনা জানান, খুলনার তেরখাদা উপজেলার আড়কান্দি গ্রামের আলোচিত শিশু তানিশা হত্যা মামলায় সৎ মা তিথী আক্তার মুক্তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাত কার্যদিবসে মামলাটির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আদালতের সূত্র জানায়, তানিশার পিতা আড়কান্দি গ্রামের আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মো. খাজা শেখ। বান্দরবান পোস্টিং ছিল তার। আগের স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর খাজা ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার আট্রাকি গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকার মৃত হোসেন আলী শেখের মেয়ে মুক্তাকে বিয়ে করেন।


বিয়ের পর মোবাইল ফোনে আসক্ত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ইমো ও মেসেঞ্জারে কথা বলতেন। এ নিয়ে খাজা স্ত্রীকে সন্দেহ করেন। এ বছরের ২ এপ্রিল মেসেঞ্জারে ফারাবি প্রসেনজিত নামে এক ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব ও কথা বলাকে কেন্দ্র করে খাজা শেখ ও মুক্তার মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাধে। একপর্যায়ে খাজা স্ত্রীকে তালাক দেওয়াসহ বিষয়টি সকলকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। খাজার ওপর প্রতিশোধ নিতে তানিশাকে হত্যার পরিকল্পনা আসে তার মাথায়।

৫ এপ্রিল রাত নয়টার দিকে মুক্তা দরজা বন্ধ করে ঘুমন্ত তানিশাকে দা দিয়ে ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করতে থাকেন। ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে তানিশার দাদি দরজা খুলতে বললে খোলেননি। পরবর্তীতে তানিশার চাচা রাজু শেখ বাড়ি এসে দরজা খুলতে বললে মুক্তা বাইরে বের হয়। ঘরে ঢুকে তানিশার নিথর দেহ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নেয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মুক্তার দাদা মো. আবুল বাশার শেখ এ ঘটনায় তেরখাদা থানায় মুক্তাকে আসামি করে মামলা করেন। এ বছরের ৩১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম মুক্তাকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় মোট ২৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।


নড়াইল সংবাদদাতা জানান, নড়াইলে আপন বোনকে পিটিয়ে ও পানিতে ডুবিয়ে হত্যার দায়ে ভাইকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার সকাল ১০টায় নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ দণ্ডাদেশ দেন। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন- নড়াইলের নড়াগাতি থানার কালিনগর গ্রামের মোকছেদ মোল্যার ছেলে রিপন মোল্যা। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বিবরণে জানা গেছে, নড়াইলের নড়াগাতি থানার কালিনগর গ্রামের মোকছেদ ওরফে মকুর মেয়ে ফাতেমা ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে বাড়ির পাশের নদীর ঘাটে কাপড় পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় পারিবারিক কলহের জেরে ভাই আসামি রিপন মোল্যা পেছন থেকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে ডুবিয়ে বাঁশের লাঠি ও টেংগারী দিয়ে জখম করে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ পানির নিচে কাদায় পুতে রাখে। ঘটনাটি আসামি রিপন মোল্যার ছেলে রাশেদ মোল্যা দেখতে পায়। রাশেদ মোল্যার বর্ণনা অনুযায়ী নদীর ঘাট থেকে লাশ উদ্ধার করে। একপর্যায়ে পুলিশ আসামি রিপন মোল্যাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার করা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ফাতেমার বাবার মোকছেদ ওরফে মকু মোল্যা বাদী হয়ে নড়াগাতি থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামি রিপনের ছেলে রাশেদসহ অন্যান্য সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।