সিডরে সব হারানো আল আমিন এখন জনপ্রতিনিধি

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ ২০০৭ সালের প্রলয়ংকারী ঝড় সিডরে সব হারানো শরণখোলার আল আমিন খান এখন জনপ্রতিনিধি। এবছর ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের (উত্তর সাউথখালী) সদস্য নির্বাচিত হন আল আমিন। সব হারানো আল আমিনকে জন প্রতিনিধি হিসেবে পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। সারা জীবন এলাকায় থেকে জনগণের জন্য কাজ করার আশা আল আমিনের।
আল আমিনের প্রতিবেশী ইলিয়াস পহোলান বলেন, সিডরে এলাকার অনেক মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে কারও মরদেহ আমরা পেয়েছি, কারও মরদেহ পাইনি। স্বজন হারানো সেই বেদনা আজও আমাদের কুরে কুরে খায়। আমাদের এই এলাকায় এমনও মানুষ রয়েছেন যে সিডরে আপন বলতে সবাইকে হারিয়েছেন। নেব নির্বাচিত ইউপি সদস্য আল আমিন খানও তেমন একজন। সিডরে সে তার পরিবারের সাত সদস্যকে হারিয়েছে। মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে একাই বাবার ভিটায় থেকেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে আল আমিনের। তারপরও এলাকার মানুষের দূর্দিনে আল আমিনকে আমরা পাশে পেয়েছি। সে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় আমরা খুবই খুশি।
হানিফ ফকির নামের আরও একজন বলেন, পরিবারের সবাইকে হারিয়ে যে টিকে থাকতে পারে, এলাকার মানুষের পাশে থাকতে পারে সে নিশ্চয়ই আমাদেরও উপকারে আসবে। তাই আমরা আল আমিনকে ভোট দিয়েছি। নাছিমা বেগম নামের ষাটোর্ধ এক নারী বলেন, অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে আল আমিন। সে এখন এলাকার মেম্বর। আমরা চাই সিডরের পর থেকে সে যেমন আমাদের পাশে রয়েছে, ভবিষ্যতেও তেমন পাশে থাকুক। নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য আল আমিন খান বলেন, সিডরে বাবা-মা, ফুফুসহ সকলকে হারিয়েছি। এরপর থেকে এলাকার মানুষের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। ছাত্র রাজনীতি করেছি। শরণখোলা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছে নিয়ে বড় হয়েছি। এবার নির্বাচনের আগে এলাকার মানুষের অনুরোধে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করি। আমার পদে আরও তিনজন প্রার্থী ছিল। স্থানীয় ভোটাররা আমে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আল আমিন আরও বলেন, ভয়ঙ্কর সিডরে পরিবারের বেশিরভাগ স্বজনকে আমি হারিয়েছি। এই ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগে আর কাউকে হারাতে চাই না। এলাকার হত দরিদ্র মানুষের জন্য পাকা ঘর, সাইক্লোন শেল্টার, সুপেয় পানি ও পাকা রাস্তা করাই আমার একমাত্র স্বপ্ন। এজন্য আমি উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য সবার দারে দারে যাব। আমি চাই আমার এলাকার মানুষ একটু সুখে থাকুক। তাদের সুখেই আমার সুখ।
শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগে নিস্ব হওয়া আল আমিন অনেক কষ্টে বড় হয়েছে। সবাইকে হারিয়েও সে এলাকার মানুষের পাশে থেকেছে। আল আমিন জন প্রতিনিধি হওয়ায় আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। তার এলাকার যেসব সমস্যা রয়েছে এসব নিরসনের জন্য আমরা চেষ্টা করব।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় সিডরে বাগেরহাটসহ দক্ষিনাঞ্চলের কয়েকটি জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই দিনে শরণখোলা উপজেলার উত্তর সাউথখালী গ্রামের আল আমিন খানের বাবা বাবা (আব্দুর রহমান), মা (সুপিয়া বেগম), ফুফু (হায়াতুননেছা) ফুফাতো বোন (হনুফা ও ফাতেমা), ভাগ্নে (আবু হানিফ) এবং নানী (নুর বানু)মারা যায়। এর পর থেকে একাই বাড়িতে থাকেন আল আমিন। পরবর্তীতে চট্টগ্রামে থাকা আল আমিনের বড় ভাই তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়িতে থাকেন।