ট্রান্স-তাসমান যুদ্ধ দুবাইয়ে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ উপমহাদেশের চার দল বিদায় নিয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সব উচ্ছ্বাসও। তবে ফাইনাল বলে কথা! তাসমান সাগর পাড়ের দুই প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের লড়াইয়ে মাঠে ব্যাট-বলের উত্তেজনাতো থাকবেই। তাদের সামনে আজ নতুন এক রাজ্য আর রাজমুকুট দখলের লড়াই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এই দুই দল দেখেনি যে শিরোপার মুখ। বলার অপেক্ষা রাখে না ক্রিকেট বিশ্ব এখন নয়া চ্যাম্পিয়নের অপেক্ষায়। আজ দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় লড়াই করবে দুই দল। তখন না থেকেও আছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে দুই প্রতিবেশীকেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছিল টাইগাররা। সেই জয়ের সুফল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিতে পারেনি। তাতে কি হারা দুই দলই সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে খেলছে ফাইনাল। এমনটা বলতে দ্বিধা করেননি অজি প্রধান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। অন্যদিকে ম্যাচের আগে অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ প্রথম শিরোপা জয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী। ১১ বছর পর ফের ফাইনালের খেলার সুযোগটিকে হাতছাড়া করতে চান না। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর ফাইনাল খেলছি। আমরা অতীতে যে ভুলগুলো করেছি সেই আক্ষেপ পূরণের এই ফাইনাল দারুণ এক সুযোগ।’
আরব সাগর পাড়ে দুই দলের ফাইনালে আসার গল্পটাও কেউ হয়তো ভাবেনি। পাকিস্তান-ভারতকে নিয়ে ছিল উন্মাদনা। কিন্তু দুই দলেরই বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছে দুই প্রতিবেশী। ভারত সুপার টুয়েলভে খেলে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। আর পাকিস্তানকে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় করেছে অস্ট্রেলিয়া। তাই ফাইনালের আগে আরব আমিরাত যে একেবারেই নীরব। দুই দলই অনুশীলন করেছে, আজ লড়াইও করবে মাঠে। তবে সেখানে দর্শকদের অপেক্ষা থাকবে শুধু নয়া চ্যাম্পিয়ন দেখার। এই করোনা মহামারির বিশ্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের সমর্থকদের যে খুব একটা আসার সুযোগ হয়নি।
নিউজিল্যান্ড দল এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসর সহ তিনবারই সেমিফাইনাল খেলেছে। এর আগে দুইবার ২০১৭ ও ২০১৬ সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল। এবারই প্রথম তারা ফাইনাল খেলছে। তাই তাদের জন্য এবারই সুযোগ প্রতিবেশী অজিদের হারিয়ে এই আসরে প্রথম শিরোপা জিতে নেয়ার। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ ফাইনাল খেলেছে ২০১০-এ। সেবার তারা হেরেছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে। ৫টি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা দলটির ক্রিকেটের এই রঙিন ফরম্যাটে নেই কোনো শিরোপা। তাই তারাই সেই আক্ষেপ দূর করতে মাঠে নামবে মরিয়া হয়েই। চলতি বিশ্বকাপে দুই দলই গ্রুপ পর্বে একটি করে ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড হেরেছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, আর অস্ট্রেলিয়াকে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ওই দুই ম্যাচ ছাড়া বাকি সবক’টি ম্যাচেই জয় পেয়েছে কিউই এবং অজিরা। তবে কিউইরা যখন বিশ্বকাপের প্রথম দিন থেকে এখনো পর্যন্ত তাদের পারফরম্যান্স ধরে রেখেছে, তখন অস্ট্রেলিয়া ধীরে ধীরে ফর্মের শীর্ষে উঠেছে।
অভিজ্ঞ কিউই ওপেনার গাপ্টিল ৯০-এর ঘরের ইনিংস খেলেছেন। তার পার্টনার ডেরিল মিচেল সেমিফাইনালের নায়ক। ব্যাটে-বলে ফর্মে আছেন জিমি নিশাম। স্পিন জুটি ইশ সোধি-স্যান্টনার রান আটকানোর সঙ্গে সঙ্গে মাঝের ওভারে উইকেটও শিকার করছেন। আর শুরু এবং শেষে একেবারে ক্লিনিক্যাল বোলিং করছেন সাউদি-বোল্ট। নিউজিল্যান্ডের জন্য ফাইনাল ম্যাচের আগে আক্ষেপের নাম ডেভিড কনওয়ে। সেমিফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেও, আউট হওয়ার পর হতাশায় ব্যাটে ঘুষি মারতে গিয়ে হাত ভেঙেছে কিউই উইকেটরক্ষকের। তার জায়গায় প্রথম একাদশে আসছেন টিম সেইফার্ট। কিছুটা হলেও শক্তি কমছে নিউজিল্যান্ডের। এটাই নিউজিল্যান্ডের প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল। তবে এই বছরই তারা তাদের প্রথম আইসিসি ট্রফি, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। একই বছরে দ্বিতীয় আইসিসি ট্রফি জিততে উন্মুখ ব্ল্যাকক্যাপসরা। অন্যদিকে চলতি বিশ্বকাপে অজিদের শুরুটা ছিল বেশ নির্জীব। কিন্তু সেমিফাইনালে কিন্তু ভয়ঙ্কর দেখিয়েছে। শুরুতে ওয়ার্নার নিজের চেনা ফর্মে ফিরে এসেছেন। মিচ মার্শ ফর্মে। লোয়ার অর্ডারেও ভালো ব্যাটিং হচ্ছে। বোলিং বিভাগে স্টার্ক দারুণ শুরু করছেন, তারপর মাঝের ওভারে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। তবে বাকি দুই পেসার কামিন্স এবং হ্যাজেলউডকে কিন্তু সেমিফাইনালে বেশ ফ্যাকাশে লেগেছে। পেস বিভাগের ধারাবাহিকতার অভাব ছাড়া অস্ট্রেলিয়া দল এই মুহূর্তে ভারসাম্যে পরিপূর্ণ। অজি শিবিরে কারোর চোট-আঘাতও নেই। তাই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম একাদশ সম্ভবত অপরিবর্তিতই থাকবে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। ২০১০ সালের তাদের নাকের ডগা দিয়ে ট্রফি নিয়ে গিয়েছিল পল কলিনউডের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড। এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়, ৫টি ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ী অজিরা। এ ছাড়াও পরিসংখ্যান বলছে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে মোট ১৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলা হয়েছে। এরমধ্যে জয়ের পরিসংখ্যানে এগিয়ে অজিরাই। তারা জিতেছে ৯টি ম্যাচ। কিউইরা জিতেছে ৫টিতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হওয়া দুই দলের মধ্যে একমাত্র ম্যাচটিতে ব্ল্যাকক্যাপসদের জয় হয়েছিল। তবে টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান হিসেবে খুব একটা মিলে না। চার-ছক্কাই বদলে গড়ে দেয় ভাগ্য।