সহিংসতার মধ্যে ঝিকরগাছা ও চৌগাছার ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধাওয়া পাল্ট ধাওয়া, টিয়ারসেল নিক্ষেপ, বুথ দখলের চেষ্টা, হামলা পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলার ২২ ইউনিয়নের নির্বাচন। বিক্ষিপ্ত ঘটনায় পুলিশসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে বৃহস্পতিবার যশোরের চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলার ২২ ইউনিয়নের ছিল নির্বাচন। বিএনপি জামাত এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় ভোটের মাঠে তেমন কোন রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকার কথা ছিল না। কিন্তু মূলত এক দলীয় নির্বাচনকে নানান হিংসাত্মক ঘটনায় সহিংস করে তোলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দল মনোনিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ অবস্থা ছিল দুই উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে।
তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গতকাল ভোট গ্রহনের সময় নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে। সকাল ৮টা থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সহিংসতার ঘটনা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চৌগাছার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়–য়া কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তবিবর রহমান খানের সমর্থকরা লাঠি শোঠা নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিহত করতে মৃদু লাঠিচার্জ করে। এসময় তবিবর রহমানের কর্মী সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় তাদের ছোড়া ইটে পুলিশের একটি পিকআপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ইটের আঘাতে ৫/৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।
এসময় জোর কের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে তবিবর রহমান খানের ২ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান তবিবর রহমান খান একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মাড়–য়া সেন্টারের প্রিজাইডিং অফিসার অধ্যাপক অহিদুল ইসলামের সাথে চরম অসৌজন্যমুলক ব্যবহার করেন বলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান।
এই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন বলেন, শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা ছিল পরিকল্পিত। পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ১ ঘণ্টা মাড়–য়া কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। বেলা ১টার দিকে ফের ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত চৌগাছা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) কাফি বিন কামাল বলেন, এই কেন্দ্রে বলপ্রয়োগ করে কিছু দুস্কৃতিকারী ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে নিবৃত্ত করে। এসময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুরসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এছাড়া দুপুর ১২ টার দিকে নারায়নপুর ইউনিয়নের পেটভার কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর কর্মীরা বাংলাদেশ কংগ্রেস দলের প্রার্থী আব্দুল গনিকে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন প্রার্থী নিজেই। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন নৌকার প্রার্থী শহিনুর রহমান শাহিন। আড়াইটার দিকে হাজরাখানা কেন্দ্রে দুই মেম্বর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তবে আইন শৃখংলা বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে দ্রুতই তা নিয়ন্ত্রনে আসে। বিকেল ৩ টার দিকে নারায়নপুর কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী তরিকুল ইসলাম ডাবলুর ভোটারদের ভোট দিতে বাধা ও জোর করে ভোট দেয়ার অভিযোগ উঠলে আইন শৃংখলাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। বাকি সময়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট চলে বলে জানা গেছে। নারায়নপুর, সুখপুকুরিয়া, পাতিবিলা, পাশাপোল, সিংহঝুলি, ধুলিয়ানি, হাকিমপুর ও স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ২/১ টি সেন্টারে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও শেষ পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ তৎপরতার কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই শেষ হয়েছে ।
এদিকে এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার সর্বত্রই শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে যে ২/১টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তা উল্লেখ করার মতো নয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ নজরদারির কারনে কোন মহলই নির্বাচনী কেন্দ্রে বাড়তি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ফলে ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। এদিকে ঝিকরগাছা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে সহিংস ঘটনা ঘটে। ভোটগ্রহণের আগেই উপজেলার হাজীরবাগ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সোনাকুড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার সময় নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান মিন্টুর সমর্থকরা বিদ্রোহী চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সমর্থক সোনাকড়ু গ্রামের সলেমান (৬০) ও আব্দুল লতিফ (৫০) কে পিটিয়ে জখম করে। এ ঘটনার পরপরই দ্ইু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৭ জন আহত হয়। আহতদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হলেন- সোনাকুড় গ্রামের সলেমান (৬০), আব্দুল লতিফ (৫০), সুমন (৩০), তুহিন (৪৫), তানিয়া খাতুন (৩৫), ইয়ার আলী (৪০) ও মোহাম্মাদ আলী (৪৭)। দুপুরে নির্বাসখোলা ইউনিয়নের দিঘড়ী কেন্দ্রে আনসার সদস্যকে মারপিটের ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলামকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নাভারন ও শংকরপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সকাল থেকেই। এছাড়া এই দুটি কেন্দ্রের বাইরে সরকারি দলের কর্মী সমর্থকদের অপতৎপরতার কারণে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। এছাড়া হাজিরবাগ ও গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা তাৎক্ষণিক অ্যাকশন নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ভোট গ্রহণে অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগ এনে ঝিকরগাছার নাভারন ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যার প্রার্থী জিয়াউল হক পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন।