সংঘাত ও প্রাণহানিতে শেষ হলো দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সংঘাত-সহিংসতায় রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গতকাল। প্রায় দেড় কোটি ভোটারের এই ইউনিয়নগুলোতে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগও এসেছে। ইউপি নির্বাচন নিয়ে কিছু দিন ধরেই সংঘাতের বিস্তার ঘটছিল দেশে; তাতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর হওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও প্রাণহানি ঠেকানো যায়নি। নির্বাচনে সহিংসতার দায় প্রার্থীদের বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব (ইসি) মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি বলেন, আমরা তো মনে করি খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইউপি ভোটে ‘একটু ঝগড়া ঝাঁটি’ হয়েই থাকে। ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের কারণে সাতটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের খবর পাওয়া গেছে। তবে সার্বিক তথ্য এলে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নরসিংদীর রায়পুরায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজনের প্রাণ গেছে। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় দুটি ইউনিয়নে আলাদা সংঘর্ষে মারা গেছে দুজন। কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকূল ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নিহত হয়েছে একজন।


মাদারীপুরের কালকিনিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে হাতবোমা বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জ সদরের শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকটি কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদের নৌকা প্রতীকে ‘সিল মারা’ ব্যালটে ভোট নেওয়ার অভিযোগ উঠে। নারায়ণগঞ্জে বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগের রাতে একটি ভোট কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভোটে সহিংসতা নিয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “পুলিশের কাজটি পুলিশ করছে। আমাদের বিশাল এলাকা নিয়ে নির্বাচন হচ্ছে। এই ইউপি নির্বাচন এটা সবসময় আপনারা দেখে আসছেন, এটা গোষ্ঠী-গোষ্ঠীর নির্বাচন, আধিপত্যের নির্বাচন, এখানে সবসময়ই একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে। যেটা হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায় হতাহতের ঘটনা আমরা দেখছি।

নির্বাচনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ নির্বাচনী সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এর দায় প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের।’ ইসি সচিব বলেন, ‘এত বড় নির্বাচন। ৮৪৫ ইউনিয়নে ভোট হলো। আমরা তো মনে করি খুব ভালো ইলেকশন হয়েছে। দু’একটি ঘটনা, যেমন যে যে জায়গায় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কেন্দ্রগুলো আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। ছয়টা জায়গায় আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে, সেই ছয়টা জায়গায় কেন্দ্রেই ভোট বন্ধ করা হয়েছে।’


হুমায়ুন খন্দকার বলেন, ‘আমরা যেটা নরসিংদীতে দেখেছি, ওই যে রায়পুরাতে, এটি সকাল বেলা প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মারা গেল। আরেকটি ঘটনাতেও প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে ইমোশনাল হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, একপর্যায়ে একটি ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ যতগুলো ঘটনা ঘটেছে এভাবেই ঘটেছে। নিঃসন্দেহে এটা খুব দুঃখজনক।

কিন্তু এতো বড় নির্বাচন, আমরা যদি গত ২০১৬ সনের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে এটি কোনো ব্যাপারইৃ ইয়ে মানে তুলনাই করতে পারেন না। অনেক কম, অনেক কম।’ ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের বিষয়টি হলো-একটি জীবনও যাতে না যায়। এটি হলো আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা। এটি আমরা মনে করি পরবর্তী যে নির্বাচন হবে-যারা প্রার্থী আছে, প্রার্থীর অনুসারী আছে এবং অন্যান্য সেবাগ্রহীতা যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে, সবাই সহনশীল হবেন। এবং আমরা মনে করি এটি, পরবর্তীতে আরো ভালো নির্বাচন হবে। হতাহতের ঘটনা আরো কম ঘটবে। পরবর্তী নির্বাচনে যে যে জায়গায় ত্রুটি হচ্ছে সেটা তো আমরা ধরতে পাচ্ছি এবং আমরা আরো কঠোর হব এবং ভাল নির্বাচন হবে।’ ইসি সঠিক ভূমিকা নিলে সহিংসতা এড়ানো যেত বলে অনেকে মনে করছেন, এক্ষেত্রে আপনারা দায় নেবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘এ দায় অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নয়। এই দায়টি হলো, যারা প্রার্থী, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, আমি বলব যে তারা তাদের অনুসারীদের দায় এটা।’