শার্শায় বিদ্রোহীদের চাপে কোণঠাসা আ’লীগ প্রার্থীরা

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থীরা। ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও নৌকার প্রার্থীরা সুবিধাজনক স্থানে এমনটি বলা যাচ্ছে না। এর কারণ, বেশিরভাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মীরা। এ বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এদিকে, ১১ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর আগে বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে না দাঁড়ালে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শার্শা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনায়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৯ জন প্রার্থী। এছাড়া ৯০টি সাধারণ মেম্বার পদে ৪৫১ জন এবং ৩০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৯৭ জন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, যশোরের শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ আছে। এর একটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের সমর্থক। অপরটি বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের সমর্থক। স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সমর্থকদের। এরই মধ্যে পুটখালি, গোগা ও বাগআঁচড়া ইউনিয়নে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার ডিহি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী আসদুজ্জামান মুকুলের বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন আলীসহ ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। লক্ষণপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আনোয়ারা বেগমের বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতা শামছুর রহমানসহ পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাহাদুরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিজানুর রহমান বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। পুটখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফফার সরদারের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নাসির উদ্দিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গোগা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আব্দুর রশীদের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী তবিবর রহমানসহ তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কায়বা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া হাসান ফিরোজ টিংকুর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাফ হোসেনসহ চারজন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। বাগআঁচড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ইলিয়াছ কবির বকুলের বিপরীতে আব্দুল খালেকসহ পাঁচজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উলাশী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রফিকুল ইসলামের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী আয়নাল হকসহ চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
শার্শা সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়া কবির উদ্দিন তোতার বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সোহরাব হোসেনসহ তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নিজামপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়া আব্দুল ওহাবের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম রেজা বিপুলসহ সাতজন মনোনায়নপত্র জমা দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, চার ইউনিয়নে মেয়র লিটন সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সংসদ সদস্য সমর্থিত ছয় ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুটখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুল গফফার সরদার বলেন, আমাদের আজ বিএনপি জামাতের সঙ্গে নির্বাচনের প্রতিযোগিতা নেই। আমাদের একজন শীর্ষ নেতা বিএনপি থেকে কিছু লোক এনে আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে মজা দেখছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৌকাকে তিনি অবমাননা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বসে থাকবো না। আমরা এসব নেতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো। এসব মুখোশধারী নেতাদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। এবারে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাদিউজ্জামান বলেন, আমরা নৌকার বিপক্ষে নই। আমরা সাবেক চেয়ারম্যান গফফার সরদারের বিপক্ষে। এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম আমি। আমি কোনো বিরোধিতা না করে নির্বাচন থেকে সরে এসেছি। আমি চাই এ ইউনিয়নে তরুণ নেতা নাসির উদ্দিন চেয়ারম্যান হোক। আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাসী নই। আমরা কোনো অপরাজনীতিকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নই। যারা এর আগে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে আমরা শুধু তারই বিপক্ষে। বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউনুছ আলী মেম্বার বলেন, এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হিসেবে পর পর তিনবার বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নির্বাচিত হলেও এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। তার নিজ গ্রাম ঘিবা আজও অবহেলিত। তিনি কোথাও যান না। তৃণমূলের কোনো নেতাকর্মীর খোঁজ-খবরও রাখেন না। সে কারণে সর্বস্তরের মানুষ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মফিজুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে আমরা বিপুল ভোটে জয়ী হবো। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, নৌকা প্রতীক যেখানে, আমি আছি সেখানে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকার মাঝি হিসেবে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তাকে বিজয়ী করবো। কোনো ভাবেই আমরা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেবো না। আর যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছেন, তাদেরও শুভবুদ্ধি উদয় হবে বলে আমি আশা করি। বিদ্রোহী এসব প্রার্থীরা ১১ নভেম্বরের আগে বিদ্রোহীরা প্রার্থিতা বাতিল করে নৌকার পক্ষে কাজ না করলে তাদের আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ পাঠানো হবে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। নৌকার বিরুদ্ধে ওই দিনের পর যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকবেন দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আমরা একটু অপেক্ষা করছি। কেন্দ্রের থেকে সেরকম নির্দেশনা আছে। বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, এবারের ইউপি নির্বাচনে দলের কোনো নেতাকর্মী অংশ নিচ্ছে না। একই সঙ্গে জামায়াতেরও কেউ অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তালিকা যেভাবে বেড়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের মধ্যে সহিংসতা ঘটাচ্ছে তাতে নির্বাচন না করাই ভালো।