ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ

0

সুন্দর সাহা ॥ আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্ল¬বে নস্যাৎ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্র। আধিপত্যবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এদিন সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনেন তৎকালীন সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাণীতে তারেক রহমান বলেছেন, “৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা এক অদম্য শক্তিতে রাজপথে নেমে এসেছিলো জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুণরুজ্জীবনের দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতাত্তোর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নিজ স্বার্থে জাতীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে আধিপত্যবাদের প্রসারিত ছায়ার নিচে দেশকে ঠেলে দেয়। শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে শুরু করা হয় একদলীয় শাসন-বাকশাল। ফলশ্রুতিতে মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, নিষিদ্ধ করা হয় দেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে। ফলে জনমনে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সংগত অধিকারগুলোকে হরণ করে। দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালে ৭৫ এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে। ৩ নভেম্বর শুরু হয় এক অরাজক পরিস্থিতি। এমতাবস্থায় ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে এবং জিয়াউর রহমান বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হন। এই অবিস্মরণীয় বিপ্লবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে বিকাশের পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। তারপরেও চক্রান্ত থেকে থাকেনি, বিদেশী শক্তির এদেশীয় অনুচররা তাদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে দেশমাতৃকার বীর সন্তান রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করে। জিয়া শাহাদাত বরণ করলেও তাঁর আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
বর্তমানে আবারো বিদেশি শক্তির ক্রীড়নকে পরিণত হওয়া শিখন্ডি সরকার রাষ্ট্রক্ষমতাকে জোর করে আঁকড়ে ধরেছে। সরকারের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে। গোপন চুক্তি সম্পাদন করে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রভূত্ব কায়েমের বেপরোয়া কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ভোটারবিহীন এই সরকার জবরদস্তির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। দেশে এক দুর্দিন ঘনিয়ে এসেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে গভীর আঁধার, তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতা-কর্মীদেরকে বিভৎস নির্মমতায় দমন করছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে নির্দয় ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকলে পৈশাচিকভাবে পিষ্ট করছে। আর নির্যাতনের এই অব্যাহত ধারায় ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। দেশনেত্রীর মুক্তির মাধ্যমেই গণতন্ত্রের মুক্তির পথ অবারিত হবে। ভোটারবিহীন পরমুখাপেক্ষী সরকারের কারণেই আমাদের আবহমানকালের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর চলছে বাধাহীন আগ্রাসন। তাই আমি মনে করি ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকে পূণরুজ্জীবিত করা এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া তারেক রহমান দিবসটি উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। অপর এক বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আমি দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তাদের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি। ৭৫-এর ৭ নভেম্বর সৈনিক-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংহত করেছিল। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবে আমাদের মাতৃভূমি প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীন অস্তিত্ব লাভ করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা শুরু হয়। স্বদেশবাসীর জাগরিত দৈশিক চেতনায় পরাজিত হয় আধিপত্যকামী শক্তির অশুভ ইচ্ছা। ১৯৭৫ সালের এ দিনে স্বাধীনতার চেতনায় আধিপত্যবাদী শক্তির নীল নকশা প্রতিহত করে এদেশের বীর সৈনিক ও জনতা। সম্মিলিত প্রয়াসে জনগণ নতুন প্রত্যয়ে জেগে উঠে। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের সফলতার সিঁড়ি বেয়েই আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছি। আইনের শাসন, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে এসেছিল। দেশ, জনগণ, স্বাধীকারসহ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনা বিরোধী সুগভির ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার স্বতঃস্ফুর্ত বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, এই বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি পেয়েছিল এক যোগ্য নেতৃত্ব জিয়াউর রহমানকে, যিনি ‘৭১ এ জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়ে জাতিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠিয়েছিলেন। আর সেজন্যই আমাদের জাতীয় জীবনে এই বিপ্লবের গুরুত্ব তাৎপর্যমন্ডিত। আজকের এই মহান দিনে আমি দেশবাসীকে আহবান জানাই-যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালে আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পূনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আবার সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে মানুষের জীবন-জীবিকা গভীর সংকটাপন্ন, আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। দেশে এখন এক ভয়ানক দুঃসময় বিদ্যমান। অবৈধ সরকারের চরম প্রতিহিংসার শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে দেশকে আবারো স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে তা থেকে উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসতে হবে। দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ। আর ৭ নভেম্বরের চেতনাই হচ্ছে-বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা. স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।” জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।