চলতি বছর বজ্রপাতে ৩২৯ জনের মৃত্যু

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বজ্রপাতে ২০১১ সাল থেকে গত ১১ বছরে দেশে মোট ২ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩২৯ জন মারা গেছেন। আর গত মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাসে সারাদেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন। শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) উদ্যোগে আয়োজিত ‘বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক বিন্যাস, কারণ ও বাঁচার উপায়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। বজ্রপাতের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিনই আসে মৃত্যুর খবর। বেশিরভাগ সময় বিচ্ছিন্নভাবে এক দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আবার কখনো কখনো একটিমাত্র বজ্রপাতে বহু মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। গত ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরযাত্রী দলের ওপর বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে শুধু গ্রামের মানুষই মারা যাচ্ছে এমনটি নয়। ৫ জুন ঢাকার মালিবাগে বজ্রপাতের সময় দুই শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা ও চট্টগ্রামে বজ্রাঘাতে প্রাণহানি বেড়েছে। তবে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও পবার সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস’র অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সুলতানা শফী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ও জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান,পবার সম্পাদক মেজবাহ সুমন, সদস্য তোফায়েল আহমেদ, কৃষক প্রতিনিধি ইব্রাহীম মিয়া, মানিকগঞ্জের যুব সংগঠক মো. মিজানুর রহমান, নেত্রকোনার বৃক্ষপ্রেমিক হামিদ কবিরাজ প্রমুখ।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সংগঠিত বজ্রপাতের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, বজ্রপাত সংঘটনের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ঠাবলীর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যার মূল ফলাফলগুলো হচ্ছে: (১) বাংলাদেশের বজ্রপাত ঋতুভিত্তিক; (২) মধ্যরাত থেকে সকালে বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি এবং মে মাসে সর্বোচ্চ (২৬ শতাংশ) বজ্রপাত হয়; (৩) বজ্রপাতের হট ও কোল্ড স্পটগুলো দিন ও রাত অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়; (৪) জলাভূমি ও স্থায়ী জলাশয়গুলোতে দিন ও রাতে বজ্রপাতের সংখ্যা অন্যান্য ভূমির আচ্ছাদনের তুলনায় বেশি; এবং (৫) সুপ্ততাপ প্রবাহ দেশের বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক বিন্যাসকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান তার বক্তব্যে বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করলে বজ্রপাতে মৃত্যুসহ ক্ষয়ক্ষতি কমার সুফল পাওয়া যাবে। আজকের এই গবেষণা প্রবন্ধটি পরবর্তী গবেষণার অন্যতম ভিত্তি হতে পারে। গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলো সাইন্টিফিক ডিসকোর্সের ভিত্তিতে সুপারিশসমূহ লাগানো যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি বড় গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এই গবেষণা উদ্যোগটি বজ্রপাত ছাড়াও নানাবিধ গবেষণার সূত্রপাত ঘটাবে এবং বাস্তবভিত্তিক বহু গবেষকের জন্ম দেবে। সেমিনারে বক্তারা বলেন, বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতন হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। বজ্রপাত থেকে জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয় সম্পর্কে জানাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মূল গণমাধ্যমকে ও সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা কার্যক্রম নিতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, আমাদের সঠিক প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বজ্রপাতের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা থেকে পন্থা অবলম্বন করতে হবে। এর জন্য অরগানাইজড ওয়েতে মুভ করা প্রয়োজন বলে তারা জানান।