ইউপি নির্বাচন শুরুর পর থেকে সহিংসতায় মৃত্যু ১৫

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ তৃণমূলের স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েই চলছে। বন্ধ হচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। ইউপি নির্বাচন আয়োজন শুরুর পর থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় ১৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবুও সহিংসতা থেমে নেই। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, ‘নির্বাচনী সহিংসতায় তারাও উদ্বিগ্ন। মৃত্যু সংখ্যা কমাতে তারাও পথ খুঁজছে।’ এদিকে, ইউপি নির্বাচন শুরুর পর থেকে সহিংসতার ঘটনায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন কমিশন নির্বাসনে গিয়েছে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলছেন, ‘ফায়দাভিত্তিক রাজনীতির ফলে নির্বাচনী সহিংসতা ঘটছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে ‘অনাস্থা’ পোষণ করে তৃণমূলের এই নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবুও অনেকটা প্রতিপক্ষহীন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহীরাই জড়িয়ে পড়ছেন দ্বন্দ্বে।’ নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম (ইসি) বলেন, ‘আপনারা যেমন উদ্বিগ্ন । আমরাও কিন্তু কম উদ্বিগ্ন না। আমরা অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। কি করা যায়, কীভাবে করা যায়, ভাবছি। এক হচ্ছে নির্বাচন বন্ধ করা। কিন্তু এটা করা যাবে না। কারণ নির্বাচন করাই আমাদের দায়িত্ব। তফসিল ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।’ পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘তাদের কড়া ইনস্ট্রাকশন দেওয়া আছে। রাজনৈতিক দল, প্রার্থীদের সাথে কথা বলছি। অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে। কীভাবে থামানো যায়; সেই পথটা আমরা খুঁজছি, চেষ্টা করছি। জানি না আমরা কতটুকু সফল হব।’ সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নরসিংদীতে রায়পুরা উপজেলার কাচারিকান্দিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং নারীসহ অন্তত ৭ জন আহত। গত ২৬ অক্টোবর মধ্যরাতে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। গত মঙ্গলবার নতুন বাজার এলাকায় ওই সংঘর্ষ হয়। এছাড়াও গত ২৪ অক্টোবর ফরিদপুরের সালথায় নির্বাচনী সহিংসতায় মারিজ সিকদার (৩৫) নামের একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। একই দিনে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক আলাউদ্দিন ওরফে আলাল (৪৫) হত্যার ঘটনা ঘটে।
গত ১৫ অক্টোবর মাগুরা সদর উপজেলার জগদল গ্রামে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতায় একই পরিবারে আপন দুই ভাইসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া প্রথম ধাপে স্থগিত ১৬০ ইউপির ভোটে নির্বাচনী সহিংসতায় গত ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় দুজন নিহত হয়েছেন। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ১ জন সহিংসতায় মারা যান।
এদিকে প্রথম ধাপের ২০৪ ইউনিয়ন পরিষদে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউপির দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নির্বাচনী সহিংসতায় বরিশালে দুজন নিহত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘নির্বাচন সংশি¬ষ্ট ঘটনায় ভোটের আগে হতাহতের ঘটনা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো মেইনলি কনসার্ন কেন্দ্রভিত্তিক ভোট কেন্দ্রে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা দেখবে। লোকাল ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি আছে। এসপি, ডিসিদেরকে কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে।’ গত ২০ জুন প্রথম ধাপে ২০৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ। দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ৮১ জনের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনীত প্রার্থী।