বঙ্গভ্যাক্স অনুমোদনে সরকারের সহযোগিতা জরুরি

0

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একটু একটু করে কমছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার তিনের নিচে নেমেছে। করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক কমেছে। রবিবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এটি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। তবে ঝুঁকিও রয়েছে। যেকোনো সময় সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। এ ঝুঁকির কথা গতকালই বলেছে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এর আগেও দৈনিক আক্রান্তের হার তিনের নিচে নামার পর আবার তা হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল। তাই, করোনা মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতিই রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিকা হচ্ছে প্রধান অস্ত্র। এর আগে টিকাসংকটের কারণে টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। আবারও তেমন সংকট তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সে ক্ষেত্রে দেশে টিকা উৎপাদন শুরু করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো উপায়। আর সেটি যদি হয় দেশে উদ্ভাবিত টিকা দিয়ে, তাহলে আরো ভালো হবে। কিন্তু দেশে উদ্ভাবিত একমাত্র টিকার প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে যে ধরনের কালক্ষেপণ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা চলছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
দেশে উদ্ভাবিত টিকাটির নাম রাখা হয়েছে বঙ্গভ্যাক্স। এর উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক। গত বছরের ২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি এই টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয়। আজও টিকাটি মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি মেলেনি। অভিযোগ উঠেছে, এই টিকার চূড়ান্ত অনুমোদন বিলম্বিত করতে ওষুধ খাতের কিছু বড় প্রতিষ্ঠান আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ছে। তাতে সহযোগিতা করছেন দেশেরই কিছু বিজ্ঞানী। এমনকি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এই টিকা অনুমোদনের ক্ষেত্রে এমন কিছু শর্ত আরোপ করে, যা অন্য কোনো টিকাকে সম্ভবত করতে হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্ভাব্য টিকার তালিকায় ইতোমধ্যেই নাম এসেছে বঙ্গভ্যাক্সের। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য-উপাত্ত দেখে সন্তুষ্ট হয়েই তালিকায় বঙ্গভ্যাক্সের নাম রেখেছে। এর পরও বাংলাদেশে টিকাটির প্রতি এমন বিমাতাসুলভ আচরণ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এ বিষয়ে টিকা বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত টিকা তৈরি হয়েছে তার অনেকটির ক্ষেত্রেই বানরের দেহে পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে একই সঙ্গে প্রাণী ও মানবদেহে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ঠাঁই হয়নি এমন টিকাও নিজ দেশের অনুমোদন নিয়ে মানব শরীরে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গভ্যাক্সকে তেমন সুযোগ তো দেওয়াই হয়নি, বরং পদে পদে প্রক্রিয়াটিকে বিলম্বিত করা হয়েছে। তদুপরি বানরের দেহে পরীক্ষার কাজটিও এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে গ্লোব বায়োটেক। সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, পরীক্ষায় টিকাটির ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে দেখা গেছে, বিশ্বে এ পর্যন্ত বড় সংক্রমণের জন্য দায়ী ১১টি ভেরিয়েন্টের সব কয়টির ক্ষেত্রেই এই টিকা কার্যকর।
আমরা মনে করি, সরকারের উচিত, বঙ্গভ্যাক্স টিকার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে গ্লোব বায়োটেককে সব ধরনের সহযোগিতা করা। আমরা আশা করি, মানবদেহের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে টিকাটি দ্রুতই বাজারে আনতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।