যৌন নীপড়ন নিয়ে আ. লীগ নেতা: ‘তোমরা সংখ্যালঘু, এত বাড়াবাড়ির দরকার কী’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মেহেরপুরে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকে যৌন নীপিড়ন অভিযোগ উঠেছে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের গোভীপুর গ্রামে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর পুলিশ মামলা নিয়েছে। এ সময় মামলা করতে গেলে বাদীকে উদ্দেশ করে বুড়িপোতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বুড়িপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তোমরা উভয়ই সংখ্যালঘু মানুষ। একটা ঘটনা ঘটেছে, ভুলে গিয়ে আপস করে ফেল। তোমাদের এত বাড়াবাড়ি করার দরকার কী বাপু। মামলা-মোকাদ্দমা করে কি সব কিছু ফিরে পাওয়া যায়?’
মামলার এজাহার অনুযায়ী বাদীর অভিযোগ, তার মেয়ে গ্রামের একটি স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি সমীর বিশ্বাসের বাড়িতে পড়তে যেত তার নয় বছরের মেয়ে। আসামির মেয়ে তার গৃহশিক্ষিকা। ২৯ সেপ্টেম্বর আনুমানিক সকাল ৬টায় প্রতিদিনের মতো তার মেয়ে পড়তে যায় আসামির বাড়িতে। তখন শিক্ষিকা ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সুযোগে ৭০ বছরের সমীর বিশ্বাস তার মেয়েকে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। পরে মেয়ের কান্নাকাটি ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি এর আগেও তার মেয়ের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে। কিন্তু ভয়ভীতির কারণে এতদিন কাউকে কিছু বলেনি।
সরেজমিন গ্রামের আব্দুল গণি, মফিজুর রহমান, শুকুর আলীকে প্রশ্ন করলে তারা জানান, সমীর বিশ্বাসের মেয়ে ভালো ছাত্রী এবং শিক্ষিকা। তাই ওই বাড়িতে গ্রামের অনেক মেয়ে পড়তে যায়। এই সুযোগে শিশু মেয়েদের নানান ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে সমীর বিশ্বাস এর আগে অনেক পরিবারের মেয়ের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে। কিন্তু আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় এবং মানসম্মানের ভয়ে এতদিন কেউ কিছু বলেনি। এবার সমীর বিশ্বাসের বিচারের জন্য গ্রামের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নির্যাতিতা মেয়ের বাবা জানান, ঘটনার পরপরই তারা পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। কিন্তু থানা মামলা নিতে গড়িমসি করে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বাড়ি ওই গ্রামের হওয়ায় তার হস্তক্ষেপে মামলা প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ সময় চেয়ারম্যান হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোমরা উভয়ই সংখ্যালঘু মানুষ। একটা ঘটনা ঘটেছে, ভুলে গিয়ে আপস করে ফেলো। তোমাদের এত বাড়াবাড়ি করার দরকার কি বাপু। মামলা-মোকাদ্দমা করে কী সব কিছু ফিরে পাওয়া যায়?’ পরে সাংবাদিকরা ঘটনা জেনে ফেললে পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর ৩০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় মামলা গ্রহণ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বুড়িপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজামান জানান, মামলা করতে নিরুৎসাহিত করার জন্য নয়, গ্রামের শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি ওই কথা বলেছিলেন। পরে ঘটনার বিস্তারিত শুনে তিনি নিজেও মামলা নিয়ে উপযুক্ত বিচার করতে পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছেন। মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান বলেন, ‘কারো চাপে নয়। ঘটনার বিস্তারিত জেনে মামলা নিতে দেরি হয়েছে। শিশুর শ্লীলতাহানির অভিযোগে আসামি সমীর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এসআই তপন কুমারকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত আসামিকে গ্রেফতার এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’।