যশোরে শব্দদূষণ রোধে পরিবেশ অদিপ্তরের কোন ভূমিকা নেই

0

তহীদ মনি ॥ যশোরে পরিবেশ অধিদফতরের একটি অফিস থাকলেও শব্দমাত্রা পরিমাপের কোনো রেকর্ড নেই। শহরে কোন অভিযান পরিচালনা এবং এই অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নজির নেই। অথচ, অনুমোদিত সর্বোচ্চ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রার শব্দে শহরের শব্দ দূষণ একেবারই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার নানামুখি ক্ষতির শিকার হচ্ছে মানুষ। ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গেজেটে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দিনের বেলায় আবাসিক এলাকায় সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য শব্দের মান মাত্রা ৫৫ ডেসিবল এবং আবাসিক ও বাণিজ্যি মিশ্র এলাকায় মানমাত্রা ৬০ ডেসিবল এর চেয়ে বেশি হলে শব্দ দূষণ হিসেবে গণ্য হবে। গত সোমবার যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদ বেলা ১১টার পর থেকে ১টা পর্যন্ত শহরের কয়েকটি স্পটের শব্দ মান মাত্রা পরিমাপ করেন। সেখানে সর্বনিম্ন ৭০ ডেসিবল থেকে ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ মান পাওয়া যায়। পরিমাপের ফল অনুযায়ী শহরের ব্যস্ততম যে কোনো জায়গা আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়র জন্য ক্ষতিকর শব্দ মাত্রায় পৌঁছে গেছে। পরিমাপে দেখা যায়, নিউমার্কেট, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্বাভাবিকভাবে শব্দমান মাত্রা ৭০ থেকে ৯৫ ডেসিবল (গড় ৮০ ডেসিবল) মনিহার এলাকায় ৮০ থেকে ৯৫ ডেসিবল (গড় ৮৭ ডেসিবল) দড়াটানা ও সদর হাসপাতালের গেটের বাইরে পর্যন্ত ৭৫ থেকে ৯৫ ডেসিবল এবং হাসপাতাল চত্বরে ৭০ থেকে ৮০ ডেসিবল শব্দ মানমাত্রা রয়েছে। তাছাড়া স্বাভাবিকভাবে সভা সভাপতির মাইক (গান বাজনা ছাড়া) চললে ১০৬ ডেসিবল পর্যন্ত বাস-ট্রাক স্বাভাবিক হর্ণ বাজালে ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ হয়। ইটভাটা মেশিন, নির্মাণের মিকচার মেশিনও প্রায় একই মাত্রায় শব্দ দূষণ করে। প্রতিদিন শহরের মানুষকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত এই শব্দের মধ্যেই থাকতে হয়। এদিকে, হাসপাতাল এলাকা নীরব এলাকার আওতাভুক্ত হলে দিনের বেলায় শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫০ ডেসিবল পর্যন্ত হতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী যশোর শহর সরকারি গেজেটভুক্ত অনুমোদিত শব্দমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। গেজেট অনুযায়ী অনুমতিপ্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না এবং নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শব্দ যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেবেন।
এদিকে, শহরের সচেতন মানুষের মতে, দিনের প্রায় পুরো সময় এবং রাতের অনেকটা তাদেরকে অতিরিক্ত শব্দ, কোলাহল, মাইকের আওয়াজ, বাস-ট্রাক, টেম্পু, মোটরসাইকেল, রিকশা- ইজিবাইকের উচ্চ ও একটানা শব্দের মধ্যে থাকতে হয়। এতে বিভিন্ন সময় তাদের শ্রবণ সমস্যা , হার্টের সমস্যা হয়, ঘুম ও বিশ্রামের সমস্যা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহারে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও শহরের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদ জানান, শহরের ভেতর এর আগে কখনো শব্দ মানমাত্রা পরিমাপ করা হয়নি। গত ৩১ আগস্ট দু’টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহারে শব্দ দূষণের কারণে ৪টি ট্রাককে সাড়ে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আবারও এ জাতীয় অভিযান পরিচালনা করা হবে।
মাত্রাতিরিক্ত শব্দ বা উচ্চ শব্দ মানুষের কী ক্ষতি করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উচ্চ শব্দে মানুষের হার্টের সমস্যা হতে পারে। রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণ ক্ষমতাসীন হতে পারে মানুষ। এছাড়া মানুষের ঘুম ও বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটলে মানুষ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে পারেন।
যশোরের নাগরিক সমাজ শিশু, বৃদ্ধ, রোগীসহ সকলকে শব্দ দূষণ থেকে মুক্ত রাখার জন্যে ধাপে ধাপে শব্দ মাত্রা কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।