বাজারে আগুন, দাম বেড়েছে আরও ডজনখানেক নিত্যপণ্যের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নিত্যপণ্যের বাজারে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনও সুখবর নেই। বাজার যেন উচ্চবিত্ত আর ধনীদের জন্যই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে যাদের আয় কম তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কোনও কিছুই কিনতে পারছেন না। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। শুধু আলু, কচুমুখী ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকার নিচে। সবচেয়ে কম দামি চাল কিনতেও লাগে ৫০ টাকা। চিকন ও মাঝারি চালের দাম ৭০ ছুঁই ছুঁই। কাঁচা মরিচ ২২০ টাকা কেজি। এমন পরিস্থিতিতেও নতুন করে বেড়েছে চাল, পেঁয়াজ, ময়দাসহ অন্তত এক ডজন পণ্যের দাম।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে আমাদের তিন বেলা ভালোভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, একদিকে বেতন কমেছে, অন্যদিকে ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ব্যয় বেড়েছে বলেও জানান তিনি। এদিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ৭ টাকার বেশি। গত সপ্তাহে যে ময়দা ৩৫ টাকা কেজি পাওয়া যেতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ১৬ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ১১০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা দরে।
রাজধানীর গোপীবাগ রেলগেট সংলগ্ন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী রাজ্জাক আলী বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে। খাদ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। আগের মাসেও প্রায় একই পরিমাণ বেড়েছে। অর্থাৎ দুই মাসে বেড়েছে ৬০ টাকার মতো। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি সপ্তাহেই ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকার মতো বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন করে এই সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। অর্থাৎ, গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যেতো। বাজারের তথ্য বলছে, নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি দরে যে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন, তা আজ বিক্রি করছেন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে তারা আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৪২ টাকা কেজি দরে। এই সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৫০ টাকা কেজি দরে। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মানিকনগর এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। তিনি বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে বলে তার ধারণা। এদিকে নতুন করে চিকন চালের কেজিতে বেড়েছে এক টাকার বেশি। একইভাবে মাঝারি চালের কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মতো। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে চাল তারা ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন, এখন তা বিক্রি করছেন ৬৬ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বাজারে ডিম প্রতি ডজন ১১৫ টাকা, গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বাঁধাকপি মাঝারি সাইজের এক পিস ৬০ টাকা, ফুলকপি ছোট ৫০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, গাজর (চায়না) ১৬০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেড় কেজির ইলিশ ১৭০০ টাকা কেজি, এক কেজির ইলিশ ১২০০ টাকা কেজি, ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩২০, কাতল মাছ ২৮০ থেকে ৩০০, কৈ ২০০, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০, শিং ৪৫০ থেকে ৬০০, পাঙ্গাস ১৪০ থেকে ১৫০, নদীর চিংড়ি ৬০০ ও পাবদা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।