পাইকগাছায় বাঁশ ও বেতশিল্পীদের দুর্দিন ১৩০ থেকে পেশা নেমেছে ২০ পরিবারে

0

এইচ.এম.শফিউল ইসলাম,কপিলমুনি (খুলনা) ॥ খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় বাঁশ ও বেতশিল্প বিলুপ্তি হতে চলেছে। অর্থাভাব ও তৈরি পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া এবং প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিতে না পারায় এ শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে এলাকায় বাঁশশিল্পের কারিগরদের ভাগ্যে নেমে এসেছে দুর্দিন। উপজেলার দুটি ঋষিপাড়ার একসময় ১৩০টি পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। সংখ্যা কমে এখন মাত্র ২০টি পরিবারে নেমে এসেছে। শিক্ষক কালিপদ সেন জানান, একসময় উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কদর ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তা আর বিশেষ চোখে পড়ে না। বাঁশের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও বেতশিল্পীরা পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। হাতে গোনা শিল্পের কারিগরেরা নিরুপায় হয়ে ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। একসময় কুলা, খাঁচা, চালনি, চাটাই, ডোল, ডালা, খাদি, ঝুড়ি, পলো, চেয়ার, পাখা, টোপা প্রভৃতি বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো। অন্যদিকে বাঁশের মূল্য বেড়েছে অনেক। যে বাঁশ ৫০- ৬০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেই বাঁশ ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় বাঁশজাত পণ্যের দাম বাড়েনি। অন্যদিকে বাঁশের বংশবৃদ্ধির আগেই উজাড় করে কাটা হচ্ছে এসব বাঁশ। উপজেলার গদাইপুরের ঋষি সম্প্রদায়ের পূজা কমিটির সভাপতি নির্মল দাশ বলেন, আমাদের এখানে দুটি পাড়ায় ১৩০ ঘরের মানুষ এ পেশার সঙ্গে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু এখন বাঁশজাত দ্রব্যের চাহিদা কম হওয়ায় মাত্র ২০টি ঘরের মানুষ এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এখন শুধু কাঁকড়া ঝুড়ি, চরো, পাটা বুনে যা পাই, তাই দিয়ে চলছে সংসার। একই এলাকার জিরো দাশী জানান, এখন বাঁশ-বেতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বাড়ায় আমাদের বাঁশ-বেতের পণ্যের দাম কমে গেছে। নেপাল দাস জানান, ক্রয়ের তুলনায় বিক্রয় মূল্য কম পাওয়ায় এ পেশা- সংশ্লিষ্টরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই পৈত্রিক এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। রাড়ুলী ইউনিয়নের ভোলা দাশ জানান, পাইকগাছার কপিলমুনি, হরিঢালীর সলুয়া, মামুদ কাটি, রাড়ুলী ইউনিয়নের বাঁকা, কাটিপাড়া, চাঁদখালীর কিছু মানুষ এখনো এ পেশাকে ধওে রেখেছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাপ-দাদার পেশাটাকে ধরে রাখতে পারবেন বলে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তারা।