নজরদারিতে কিউকম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অবিশ্বাস্য সব অফার দিয়ে আলোচনায় আসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। দেড় বছর আগে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ ফুলেফেঁপে উঠেছে। পণ্য দেয়ার নাম করে তারা সংগ্রহ করেছে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা। কিন্তু, অনেক গ্রাহককে তারা পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ই-কমার্স ব্যবসায় তারা এনেছেন নতুন ফন্দি। কোনো কোনো গ্রাহক তিনটি পণ্যের অফার দিলে একটি বুঝিয়ে বাকি দুইটির জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে বলেন। এতে অনেক গ্রাহক ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর বিরক্ত হয়েছেন। কেউ পণ্য পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। আবার অনেকেই অফিসে বার বার ধরনা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। ইতিমধ্যে কিউকম তার অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানে লগ্নি করা গ্রাহকরা পথে বসার উপক্রম। তবে কিউকম পণ্যের অফার সাইট চালু আছে। আবার কিউকমের প্রতিষ্ঠাতা রিপন মিয়ার সঙ্গে ইভ্যালির সিও রাসেলের সঙ্গে যোগসাজশ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও কিউকমের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত আছে আরজে নীরব। তাদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোনো মুহূর্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
এ বিষয়ে র‌্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল জানান, ‘যে সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রিপন মিয়া মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করেছেন। সেখানে তিনি মাল্টিলেবেল ও ফুট মার্কেটিং এর কোর্স করেছেন এবং সেখানে কিছুদিন ব্যবসাও করেছেন। ২ বছর আগে তিনি দেশে এসে ঢাকার পান্থপথে একটি অফিস ভাড়া করে মাল্টিলেবেল মার্কেটিং এর অফিস খুলেন। কিন্তু, সেই ব্যবসায় তিনি কোনো লাভ করতে না পারার কারণে অফিসটি বন্ধ করে দেন।
সূত্র জানায়, ব্যবসার সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ইভ্যালির সিও রাসেলের। মূলত রাসেলের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কিউকম। ধামাকা অফার দিয়ে তিনি শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। তার কোম্পানিতে টেলিভিশন, ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলের অফার দিতেন। কম মূল্যের কারণে তার প্রতিষ্ঠানে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। পণ্যের মূল দামের সঙ্গে প্রায় ৭৫ ভাগ ছাড়ের ঘোষণা থাকতো। সূত্র জানায়, যেসব গ্রাহক অর্থ পাবেন তারা পড়েছেন বিপাকে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসার প্রথমে কিছু গ্রাহকদের পণ্য ঠিকমতো বুঝিয়ে দিয়েছিল। এছাড়াও তারা মার্কেটিং বেশ দক্ষতাও দেখিয়েছিল। কিন্তু, ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকেই তারা গ্রাহকদের পণ্য দিতে টালবাহানা শুরু করে। যারা পণ্য পাননি তারা টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো তাদের নানারকম হুমকি-ধামকি দেয়া হতো। রিপন মিয়া মাঝে-মধ্যে কিউকমের ফেসবুকে এসে গ্রাহকদের পণ্য বুঝিয়ে দেয়ার কথা বললেও অনেক গ্রাহক পণ্য বুঝে পাননি। সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিষ্ঠানটির অর্থের উৎস এবং গ্রাহকের অর্থ তারা কোথায় রেখেছেন তা খুঁজছে। কারণ প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা এই প্রতিষ্ঠানের নামে লেনদেন হয়েছে। তাদের একাধিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট আছে। সেই অ্যাকাউন্ট গুলোতে কতো টাকা রয়েছে এবং কতো টাকা লেনদেন হয়েছে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। তবে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন যে, এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক একাউন্টে উল্লেখযোগ্য টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়নি। এতো টাকা কোথায় গেল সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তারা। সূত্র জানায়, কিউকমের সঙ্গে চলচ্চিত্র পাড়ার এক তারকা জড়িত আছেন। ওই তারকা একটি টেলিভিশনের নতুন মুখের সন্ধানে খোঁজা এক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচিত্র অঙ্গনে পদচারণা। কিউকমের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। কয়েকদিন ধরে তিনি চুপসে গেছেন। বাসার বাইরে যান না। তাকে নজরদারিতে রেখেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে কিউকমের প্রধান নির্বাহী রিপন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত হুমায়ুন কবির নীরবেরও (আর জে নীরব) মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।