ঝঁকঝঁকে তকতকে সবুজে ঘেরা দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন দর্শনা

0

রিফাত রহমান,চুয়াডাঙ্গা ১৮৭১ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ভারতের কলকাতা ও বাংলাদেশের গোয়ালন্দ রেল যোগাযোগ চালু করলে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনটি চালু হয়। এটিই দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন। এটা আমদানী-রফতানী শুল্ক স্টেশন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ স্টেশনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে এবং এটা ব্যবহার করে ভারত থেকে প্রতিদিনই ট্রেনের ওয়াগানে করে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানী করা হয়। ঐতিহাসিক এ স্টেশনটি আগে ছিলো বেশ অপরিস্কার। স্টেশনের চারিদিক ছিলো ঝোঁপ জঙ্গলে ভরা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র একেবারে ভিন্ন। এ রেলওয়ে স্টেশন এখন ঝঁকঝঁকে তকতকে, চরিদিকে সবুজ গাছপালায় ঘেরা বেষ্টনি আর ঝলমলে আলোয় আলোকিত। এই স্টেশনটিতে এক দারুন পরিবেশ বিরাজ করছে। এটি সম্ভব হয়েছে বর্তমান স্টেশন সুপারিনডেন্ট মীর মো: লিয়াকত আলীসহ কর্মচারিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট স্টেশন সুপারিনডেন্ট এ স্টেশনে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনের পরিবেশ পাল্টে গেছে।


সরেজমিনে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের দুপাশে প্লাটফর্মের ফাঁকা জায়গা টুকু সম্পূর্ণ কাজে লাগিয়েছেন এখানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ। প্রথমে তারা ফাঁকা অংশ টুকুতে ফুল বাগান করেন। কিন্তু বাগান পরিচর্যার জন্য জনবল ও ফুলের চারা কিনে বাগান টিকিয়ে রাখার সামর্থ না থাকায় সেখান থেকে সরে আসতে হয়েছে তাদের। ওই স্থানটিতে লাগানো হয় আম, কাঁঠাল, বেল, নীম, দেবদারু, শিউলি ও বকুল ফুল গাছ।

গাছ গুলো ধিরে ধিরে বড় হচ্ছে। ফলদ গাছ গুলোতে ফল ধরা শুরু হয়েছে। সবুজের সমারহে ঘেরা গোটা স্টেশন চত্বরটি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে। দেখা যায় একটি বানর গাছের ছাঁয়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে। অন্য রকম পরিবেশ বিরাজ করছে এ স্টেশনটিতে। দিনের বেশীভাগ সময়ই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা স্টেশনের প্লাটফর্ম ঝাঁটদিয়ে ঝঁকঝঁকে করে রাখেন। কোন প্রকার ময়লা আবর্জনা জমতে দেননা এখানে। এই প্লাটফর্মে প্রতিদিন সকাল বিকাল ও সন্ধ্যায় সাধারণ নারী পুরুষ হাঁটাহাঁটি করতে আসেন। নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঘেরা এই মনোরম পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন বলে তারা জানান। তাছাড়া অনেকে এখানে নিরিবিলি বসে সময় কাটাতে আসেন। দর্শনার এক রেলযাত্রী মাহফুজ উদ্দীন খাঁন পেশায় সাংবাদিক। তিনি বলেন, সারা দেশে রেলওয়ে স্টেশন গুলোতে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনের মত পরিবেশ থাকলে যাত্রীরা রেল ভ্রমনে আকৃষ্ট হবেন।


ঠিক অভিন্ন কথা বলেন, আরেক রেলযাত্রী এনজিও কর্মকর্তা কামরুজ্জামান যুদ্ধ। তিনি বলেন, এ রেলস্টেশনে প্রবেশ করলেই মনটা জুড়িয়ে যায়। কোন প্রকার হই হট্টগোল ঠেলাঠেলি নেই। এখানে সবই সুন্দর পরিবেশে পরিচালিত হচ্ছে। এ রকম পরিবেশ অন্যান্য রেলস্টেশনে হওয়া প্রয়োজন। তাহলে রেল ভ্রমনের প্রতি যাত্রীরা আরো বেশী আগ্রহী হবেন। রেলস্টেশনে হাঁটতে আসা গৃহবধু রিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। দর্শনাতে তো আরো হাঁটার জায়গা আছে, সেখানে না গিয়ে এখানে কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রেলস্টেশনটি মহিলাদের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। তাছাড়া এখানকার সবুজ গাছপালা বেষ্টিত পরিবেশে বেশ স্বচ্ছন্দবোধ করি। সে জন্যই এখানে আসি।


দর্শনা রেলস্টেশনের স্টেশন সুপারিনডেন্ট মীর মো: লিয়াকত আলী বলেন, ২০১৫ সালে এখানে যোগ দেয়ার পর ঐতিহ্যবাহী এ রেলওয়ে স্টেশনটির পরিবেশ বেশ অপরিচ্ছন্ন ছিলো। এখানকার চারপাশ খোলা ছিলো। রাত হলেই স্টেশনটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যেতো। বর্তমান পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। এখানকার কর্মচারিবৃন্দের যথেষ্ঠ আন্তরিকতা ও সকলের প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এ স্টেশনে প্রথম পর্যায়ে অনেক কিছুরই অভাব ছিলো। সে কারনে এখানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করতো।

প্রথমে আমরা স্টেশনের প্লাটফর্মের দুপাশে ফাঁকা জায়গা চারিদিকে ঘিরে সেখানে ফুলের বাগান তৈরি করি। কিন্তু নানাবিধ কারনে সেটা আর ধরে রাখা যায়নি। পরে ওই স্থানে আমরা ফলদ ও বনজ গাছ লাগায়। এ স্টেশনটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। কেউ যেনো স্টেশনটি নোঙরা করতে না পারে সেদিকে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখি আমরা। এই রেলস্টেশনের চারিপাশে গাছপালা থাকায় এই গাছে বিভিন্ন প্রজাতের পাখি বসে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। যখন দেখি ছায়া ঘেরা পরিবেশে মানুষ তাদের সারাদিনের কর্ম সেরে এসে এখানে বিশ্রাম নেই, তখন খুব ভাল লাগে। আমাদের মত অন্যরা এটাকে অনুকরণ করলে রেলের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বাড়বে।