নি¤œচাপ বিলম্বিত হলে যশোরে সবজি চাষিদের ক্ষতির আশঙ্কা

0

আকরামুজ্জামান॥ চলমান নি¤œচাপ বিলম্বিত হলে যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবজি চাষিদের সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। এক মাস আগেও কয়েকদফা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এ অঞ্চলে শীতকালীন আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়। শেষ পর্যন্ত ক্ষতি পুশিয়ে নিতে কৃষকরা দ্বিতীয় দফা শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভের আশায় যখন বুক বেধে আছেন ঠিক সেই সময়ে যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নি¤œচাপের কারণে শুরু হয়েছে ভারি বৃষ্টিপাত। কৃষক বলছে এ বৃষ্টি আমন আবাদের জন্য আশির্বাদ হলেও সবজি চাষের জন্য কাল হয়ে দেখা দিতে পারে। মঙ্গলবার জেলায় ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যর আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে সাগরে নি¤œচাপ সৃষ্টি হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে সোমবার বেলা ৩ টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তবে যশোরাঞ্চলে এ বৃষ্টিপাত ভারি আকারে ধারণ করে মঙ্গলবার সকাল থেকে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাটিতে অবস্থিত আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, নি¤œচাপের কারণে যশোরাঞ্চলে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত এ জেলায় ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাতে আরও বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান।
ঢাকাস্থ আবহাওয়া অফিসের একজন একজন কর্মকর্তা জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপটি স্থলভাগের দিকে আসছে। স্থলভাগের দিকে যত আসছে ততই এটি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এর প্রভাবে দক্ষিণের জেলাগুলোতে অতিবর্ষণের পাশাপাশি নদনদীর পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা আগামী দু,একদিন বিরাজমান থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময়ে বাতাসের গতি ৫০ এর ওপর দিয়ে প্রবাহমান হতে পারে।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা মারাত্মকভাবে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টি বিলম্বিত হলে এ অঞ্চলের অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হয়ে যাবে। শীতকালীন সবজি উৎপাদনে এর প্রভাব চরমভাবে পড়বে। যশোরে বছরে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়। প্রায় সমপরিমাণ জমিতে চাষ হয় গ্রীষ্মকালীন সবজি।
যশোর সদর উপজেলার নোঙরপুর মাঠের সবজি চাষি আব্দুস সালাম বলেন, নি¤œচাপের কারণে যে বৃষ্টি হচ্ছে এতে ফুলকপি, বাধাকপি, মূলা, পালঙ শাকের জন্য মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। নোঙরপুরসহ আশপাশের মাঠে এখন ফুলকপি ও বাঁধাকপির ব্যাপক চাষ হয়েছে। এসব সবজি ইতিমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বৃষ্টির কারণে এসব কপি নিশ্চিত পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
কবির হোসেন নামে আরেক সবজি চাষি বলেন, এবছর বলেন, শীতকালীন আগাম সবজি চাষের শুরুতেই বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এখন দ্বিতীয় দফা চাষ করে কৃষকরা ক্ষতি পুশিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ নি¤œচাপটি আরেকদফা আমাদের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে বৃষ্টি যদি আরও দুই থেকে তিন অব্যাহত থাকে তাহলে এসব সবজি ক্ষেতেই পচে যাবে। তাতে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষন কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস বলেন, ভারি বৃষ্টি হলে অবশ্যই সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হবে। তবে এটি বিলম্বিত না হলে সবজির জন্য আশীর্বাদও হতে পারে। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত থেকে সবজি ক্ষেত রক্ষা করার জন্য কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়েছি। বিশেষ করে বৃষ্টির পানি যাতে ক্ষেতে জমে না থাকতে পারে সে জন্য তাদেরকে জমির আইল কেটে রাখার পরামর্শ দিয়েছি।