বাড়তি শিফট, চাপে শিক্ষকরা

0

আলতাফ হোসাইন॥ চোখে মুখে উচ্ছ্বাস। কাঁধে ব্যাগ, পায়ে সাদা জুতা আর ইউনিফর্ম পরে দলবদ্ধ কিশোর-কিশোরীরা ছুটছে স্কুলের দিকে। সময় তখন সকাল সাড়ে ৯টা। রাজধানীর শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ ক্যাম্পাসে এক আনন্দঘন পরিবেশ। দীর্ঘদিন পর বন্ধু ও শিক্ষকদের সামনাসামনি পেয়ে যেন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের। চারদিকে খুশির আমেজ। এবার ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে একে অপরকে বরণ করে নেয়ার পালা। এরইমধ্যে পড়ে গেল মহামারিকালে প্রথম ক্লাসের প্রথম ঘণ্টা।
প্রথম ক্লাসে পড়াশোনা কম, তাই ক্লাসের সময়টা পার হচ্ছে শিক্ষকদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। আর ক্যাম্পাসের বাইরে অভিভাবকদের ভিড়। আছে করোনা সংক্রমণের ভয়, তবুও স্বস্তি স্কুলের তালা খোলায়। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হলেও বাড়তি চাপে পড়েছেন শিক্ষকরা। কারণ, শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ছেলেমেয়েদের দুই শিফটের জায়গায় করা হয়েছে ৪ শিফটের ক্লাস। আর এতেই অতিরিক্ত চাপ নিতে হচ্ছে শিক্ষক ও কর্মচারীদের।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসাইন বলেন, আগে ছিল মর্নিং শিফট এবং ডে শিফট। এক্ষেত্রে আমাদের সময় ঠিক আছে। তবে আমাদের যে ৪টি সেকশন ছিল, সেখান থেকে ভেঙে এখন ৬টি সেকশন করা হয়েছে। যার ফলে শিক্ষক একটু বেশি লাগছে। তবে ক্লাসের সংখ্যা আবার অনেক কম আছে। সেজন্য আপাতত তেমন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তবে শিক্ষকদের একটু বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের অনলাইনেও ক্লাস চলছে, আবার শ্রেণিকক্ষেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। ক্লাসে যারা মর্নিং শিফটে নিচ্ছে, অনলাইনেও তাকে আবার ক্লাস নিতে হবে। আবার এসাইনমেন্ট আছে। সবমিলিয়ে শিক্ষকদের তুলনামূলক একটু চাপ নিতে হচ্ছে।
স্কুলের গেটে কথা হয় রতন নামে একজন অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেকদিন পর স্কুলে আসতে পেরে বাচ্চারা খুবই খুশি। আমরা অভিভাবকরাও এতদিন ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন স্কুল খোলায় স্বস্তি পেয়েছি। যদিও করোনা সংক্রমণ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এরমধ্যেই যতোটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখলে অভিভাবকদের আর চিন্তা করতে হবে না।
ওদিকে মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সেটি উপেক্ষিত হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে তাপমাত্রা মাপা, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে শিক্ষার্র্থীদের পুরোপুরি স্বাস্থ্য বিধির আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসাইন। তিনি বলেন, আমরা যতোটুকু সম্ভব সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে চাই। অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলে দেয়া হয়েছে। স্কুলে প্রবেশের সময় তাপমাত্রা মেপে তারপর শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। তবুও ছোট ছোট বাচ্চাদের আর কতোটুকুই বা বুঝিয়ে রাখা যায়। যদিও আমরা ছাত্রছাত্রীদের টিফিন আনতে নিষেধ করেছি। এ ছাড়া সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও পুরোপুরি তাদের স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা সম্ভব না। সরজমিন কলেজে গিয়ে দেখা যায়, শুরুর দিকে তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হলেও পরে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার ও তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া বাইরে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অভিভাবকদের ভিড় করতে দেখা যায়।