কানাডার বেগমপাড়ায় এমপি শিমুলের বাড়ি আছে কি না জানতে চান হাইকোর্ট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল তার স্ত্রীর নামে প্রায় দুই মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার খরচ করে বেগমপাড়ায় ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনেছেন কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। নাটোরের মো. রেজাউল চৌধুরীকে এ বিষয়ে তথ্য ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের কপি জমা দিতে বলা হয়েছে। ‘স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন এমপি শিমুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্টধারীদের নামের তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ পড়েছে বলে হাইকোর্টে এডিশন পার্টি (পক্ষভুক্ত) হওয়ার জন্য এক ব্যক্তির করা আবেদন শুনানি নিয়ে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। আদালতে আজ আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. আবদুর রাজ্জাক। তার সঙ্গে ছিলেন মো. বেলাল হোসেন। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি ও মো সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ। পক্ষভুক্ত হওয়ার আর্জিতে জানানো হয়, পুলিশের বিশেষ শাখার (ইমিগ্রেশন) দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকায় নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নাম বাদ পড়ায় তাদের নামে কানাডায় বাড়ি থাকার কথা জাতীয় দৈনিকে গত ২৯ মে ও ৮ জুন প্রকাশ পায়।
ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে নাটোরের মো. রেজাউল চৌধুরী হাইকোর্টে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেন। আবেদনটি শুনানি শেষে তা নিষ্পত্তি করে (ডিসপোজ) তাকে পক্ষভুক্ত না করে তার কাছে কি কি সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে সেটি হলফনামা আকারে হাইকোর্টে জমা দিতে বলেন। একই সঙ্গে একটি করে কপি, রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে দিতে বলেছেন আদালত। আদেশের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, জাতীয় সংসদের নাটোর-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নামে কানাডায় বাড়ি আছে কি না তার সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। নাটোরের মো. রেজাউল চৌধুরীকে এই তথ্য ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর কপি দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের কাছেও দাখিল করতে বলা হয়েছে। হাইকোর্ট গত বছরের ২১ ডিসেম্বর এক আদেশে অর্থপাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ করেছে অথবা কিনেছে, যেসব বাংলাদেশির দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যারা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে-বিদেশে আসা-যাওয়া করছেন, তাদের তালিকা চেয়েছিলেন। এ নির্দেশে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) কার্যালয় থেকে রাষ্ট্রপক্ষকে গত ৩১ মার্চ জানানো হয় যে, দুই দেশের নাগরিক হিসেবে ১৩ হাজার ৯৩১ বাংলাদেশির তথ্য পাওয়া গেছে। এরা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্য একটি দেশের নাগরিক। সে হিসেবে তারা দ্বৈত পাসপোর্টধারী।
হাইকোর্টে দাখিলের জন্য পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী সর্বমোট ১০৪ দেশের নাগরিক এরা। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ হাজার ৭৭৪ জন। এই তথ্য আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ অবস্থায় ওই তালিকায় নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রীর নাম নেই অভিযোগ করে আদালতে মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেন রেজাউল চৌধুরী। এ বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক জাতীয় দৈনিকে ‘স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন এমপি শিমুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে ৬ সেপ্টেম্বর এই আবেদন করা হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ১৩ হাজার ৯৩১ জন দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্টধারী রয়েছে বলে ইমিগ্রেশন পুলিশ যে তথ্য দিয়েছিল, সে বিষয়ে এখনও শুনানি হয়নি।