বাবার আপিলে সাড়া দেননি আদালত, মেয়েদের সঙ্গে থাকবেন জাপানি মা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দুই মেয়েকে নিয়ে বাধাহীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে চলাচল ও রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমানোর অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত। হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশি বাবার করা আপিল আবেদনে নো অর্ডার দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার জজ আদালত। বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এই আদেশ দেন তিনি।
আদালতে বাবার আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে, জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এর আগে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুই মেয়েকে নিয়ে বাধাহীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে চলাচল ও রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমানোর অনুমতি পেয়েছিলেন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো। আর বাবা দুই শিশুর সঙ্গে দিনের বেলা থাকতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালত তার আদেশে বলেছিলেন, বাবা-মা দুজনই তাদের শিশুদের নিয়ে বাইরে যেতে ও কেনাকাটা করতে পারবেন। এছাড়া ফ্ল্যাটের ভেতরে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা অপসারণ করতে হবে। তবে বাসার বাইরে থাকতে পারে সিসি ক্যামেরা। একই সঙ্গে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে দুই শিশুর বাবা-মাকে নিয়ে প্রচারিত ‘অবমাননাকর ভিডিও’ অপসারণে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়া ওই ভিডিওগুলো যারা তৈরি ও প্রচারের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সিআইডির সাইবার টিমকে নির্দেশনা দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন।
আদালত বলেছেন, ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বাবা শিশুদের সঙ্গে থাকতে পারবেন। তবে ৯, ১১, ১৩ ও ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে শিশুরা মায়ের সঙ্গে থাকবে। একদিন পরপর দেওয়া হলো। এসময় ওই বাসায় দিনে শিশুদের বাবা থাকবেন। মা যদি শিশুদের নিয়ে বেড়াতে যেতে চান, তা পারবেন। শিশুদের বাবা মনে করলে তিনিও দু–এক ঘণ্টার জন্য তাদের নিয়ে বাইরে বেড়াতে যেতে পারবেন। আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করেন শিশুদের বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে নো অর্ডার আদেশ দেন চেম্বারজজ। এর আগে জাপান থেকে ঢাকায় এসে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে গত ১৯ আগস্ট নাকানো এরিকোর করা রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত তার আদেশে দুই মেয়েসহ তাদের বাবা ও ফুপুকে ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ওই দুই মেয়েকে নিয়ে বাবা ৩০ দিন বিদেশ যেতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর দুই মেয়েকে বাবার হেফাজত থেকে সিআইডি উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে। এ বিষয়টি গত ২৩ আগস্ট মেয়েদের বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চের নজরে আনেন।
দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখার নির্দেশ দেন। সেসময় প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাবাকে শিশুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন আদালত। সে অনুযায়ী বা-মা শিশুদের সঙ্গে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সময় দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের আইনজীবী আদালতে এসে জানান শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তখন আদালত উভয়পক্ষকে বলেন, কোথায় থাকলে ভালো হয় সে বিষয়ে সমঝোতা করে সিদ্ধান্ত জানাতে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ৩১ আগস্ট দুই মেয়েসহ তাদের মা-বাবা ও ফুপু হাইকোর্ট কক্ষে উপস্থিত হন। এরপর দুই পক্ষের আইনজীবীরা শুনানি শুরু করেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীসহ দুই মেয়ে ও তাদের মা-বাবা ও ফুপুকে খাস কামরায় ডেকে সবার বক্তব্য শুনেন হাইকোর্ট। গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের পরদিন ১ সেপ্টেম্বর থেকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে রয়েছে জাপান থেকে আসা ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই শিশু। শিশুদের বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ওই বাসায় তাদের রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শুনানি নিয়ে ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আদেশ দেন। আদেশে হাইকোর্ট উল্লেখ করেন, শিশুদের বাবা ও মা যৌথভাবে আপাতত তাদের দেখাশোনা করতে পারবেন। ওই ফ্ল্যাটের ব্যয় মা-বাবা সমানহারে বহন করবেন। শিশুদের বাবা ও মায়ের ওই বাসায় অবস্থান করার স্বাধীনতা থাকবে। শিশুদের সঙ্গে তাদের বাবা-মা একান্তে সময় কাটাবেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন। শিশুদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। শিশু ও তাদের মা-বাবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।