আবরার হত্যা মামলা: আসামিদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই সাথে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির পুনরায় অভিযোগ গঠন করার জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি পুনরায় অভিযোগ গঠন করে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এই দিন ধার্য করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, এই মামলাটির অভিযোগ গঠনের সময় কিছু অংশ বাদ গিয়েছিল। তাই আমরা আদালতের কাছে বিষয়টি জানাই। এরপর আদালত পুনরায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের রিকল করবে না বলে জানান। তাই আদালত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নতুন দিন ধার্য করেছেন। মামলায় মোট ৪৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানোর আদেশ দেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন ৩ জন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এজাহারে থাকা আসামিরা হলেন— মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম। এজাহারবহির্ভূত ৬ আসামি হলেন— ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ। পলাতক তিন আসামি হলেন— মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুই জন এজাহারভুক্ত আসামি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে শেরে বাংলা হলের তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত তিনটার দিকে ওই হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ পরে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।