ছাত্রলীগ নেতা আকুলকে আট অস্ত্রসহ আটকের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

0

বিশেষ সংবাদদাতা॥ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রসহ রাজধানীর দারুসসালামে যশোরের ছাত্রলীগ নেতা আকুল হোসেন গ্রেফতারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বেরিয়ে আসছে তার নানা অপকর্মের কাহিনি। দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্র, মাদক ও চোরাচালান চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে কাজ করছেন আকুল। তবে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় এপারের একটি চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজারদারিতে ছিলেন। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে তিন দিনের রিমান্ডে থাকা আকুলসহ বাকিদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

সীমান্তের ওপার থেকে কারা কীভাবে অস্ত্র ঢোকাচ্ছে, কারা রিসিভ করছে, কীভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, কারাই বা এ ব্যবসায় পৃষ্ঠপাষকতা করছেন- এ সংশ্লিষ্ট একটি চিত্র পেয়েছেন তারা। তবে তথ্যের বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, কৃষিশ্রমিকের মাধ্যমেই অস্ত্র, মাদক এবং মূল্যবান পণ্যের চোরাচালান করে আসছে আকুল সিন্ডিকেট। সীমান্তের ওপারে তিন মহাজনের অস্ত্র ব্যবসা করে আসছেন ২০১২ থেকে। গত কয়েক বছরে তিনি ২ শতাধিক অস্ত্র বিক্রি করেছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ভারতীয় অংশে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কৃষি কাজ করতে যাওয়া কিছু কৃষককে ম্যানেজ করে ওপারের সিন্ডিকেট। অবৈধ অস্ত্র কিংবা অন্যসব পণ্য ভালো করে প্যাকেট করে মাটিতে পুঁতে রেখে আসে। পরবর্তীতে এ চক্রের সদস্যরা কৃষক হিসেবে নির্দিষ্ট একটা সময়ে গিয়ে সেই প্যাকেটটা নিয়ে আসে। এ চক্রের সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্থলবন্দর হওয়ার কারণে দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে রয়েছে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আকুল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে যেন ঘুম নেই তাদের। ভুগছেন নানামুখী আতঙ্কে।


ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেফতাররা এখন রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য আমরা পাচ্ছি। তবে সব তথ্যই যে সঠিক তা এখনই বলা যাবে না। এসব তথ্য খতিয়ে দেখার আগে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’
সূত্র বলছেন, বর্তমানে ৭.৬৫ বোরের অস্ত্রের দাম ভারতে ২২ থেকে ২৮ হাজার রুপি। দেশে এগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। ৯ এমএম পিস্তল ৩ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি ব্যারেলের পাওয়া যায়। ৩ ইঞ্চি ব্যারেলের ৫৭ হাজার রুপির পিস্তল বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার এবং ৫ ইঞ্চির ৫২ হাজার রুপির পিস্তল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ হাজার টাকায়।

৭.৬৫-এর গুলি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১২০০ টাকায়। চক্রটি অস্ত্র ব্যবসা ছাড়াও তক্ষক প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, সোনা চোরাচালান, প্রত্নতত্ত্ব প্রতিমা, আইস ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছিনতাই, চুরি, ভূমি দখল, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের কাজে অস্ত্রের চাহিদা রয়েছে। আগামী নির্বাচন টার্গেট করে কোনো গোষ্ঠী এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি রাজধানীর ভাসানটেকে এক ঠিকাদারকে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার ও কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধানে নেমে চক্রটির সন্ধান পায় ডিবির গুলশান বিভাগ।

এর পরই চক্রের হোতা আকুল ও তার চার সহযোগী ইলিয়াস হোসেন, আবুল আজিম, ফজলুর রহমান ও ফারুক হোসেনকে আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন, আটটি গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। চক্রটির মূল হোতা আকুল হোসেন যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। অস্ত্র, চাঁদাবাজি, মাদকসহ তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালেও অস্ত্রসহ বেনাপোল থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে বেরিয়ে একই কাজে ফিরে যান তিনি।

গতকাল শার্শা থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘আকুলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সে মেয়র গ্রুপ করে আমি এমপি গ্রুপ করি। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আকুল। তারা একসঙ্গে এম এম কলেজে পড়ত। সম্মেলনে সেক্রেটারি হিসেবে প্রথম কমিটিতে আকুলের নাম ছিল না। দ্বিতীয় দফায় জেলা সাধারণ সম্পাদক আমাকে এবং আকুলকে রেখে আরেকটি কমিটি ঘোষণা দেন। যদিও সবশেষ আকুল গং এ কমিটির বৈধতা আদায় করে নেয়। সে এলাকায় অনেক যুবককে বিপথে নামিয়েছে। সে গ্রেফতারের পর এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করেছে।’