আ.লীগ নেতাসহ আটক ৩, একজনের স্বীকারোক্তি: শার্শায় প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক ও জমি নিয়ে বিরোধে খুন হন ইসরাফিল

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া এবং জমি নিয়ে বিরোধের কারণে হত্যা করা হয়েছে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গার ইসরাফিল হোসেন (৩৭) নামে এক যুবককে। গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। ইসরাফিল হোসেনকে হত্যা করার জন্য দেড় লাখ টাকা চুক্তি হয়েছিলো। ডিবি পুলিশ এই হত্যার পরিকল্পনাকারী নারীসহ ৩ জনকে ইতোমধ্যে আটকও করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে যশোর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আটককৃতরা হলেন-কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে নুর আলম (৪২), মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে মোশারফ হোসেন (৪৫) ও ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩২)। এর মধ্যে মোশারফ হোসেন উলশী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত ২৭ আগস্ট কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে বিড়ি শ্রমিক ও মাদক ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেন নিখোঁজ হন। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে স্ত্রী রোজিনা বেগম ২৯ আগস্ট শার্শা থানায় একটি জিডি করেন। এই জিডি’র সূত্র ধরে নিখোঁজ ইসরাফিল হোসেনের সন্ধানে মাঠে নামে ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম। তিনি নানা তথ্যের ভিত্তিতে এ সময় সন্দেহভাজন উল্লিখিত ৩ জনকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইসরাফিল হোসেনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের মোড়লবাড়ি বড় কবরস্থান থেকে মাটি চাপা দিয়ে রাখা তার লাশ গত বুধবার উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, আটক মর্জিনা বেগমের ভাই আলী নুর বিদেশ থাকেন। তার স্ত্রী রিনার সাথে ইসরাফিল হোসেনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো। তাছাড়া জমি নিয়ে মর্জিনা বেগমের সাথে ইসরাফিল হোসেনের দ্বন্দ্ব চলছিলো। এর জের ধরে মোশারফ হোসেনের সাথে দেড় লাখ টাকা চুক্তিতে ইসরাফিল হোসেনকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করেন মর্জিনা বেগম। এই হত্যা মিশনে সরাসরি অংশ নেন নুর আলম ও মেহেদী নামে এক যুবক। মেহেদী ওই গ্রামে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করেন। তাকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন, যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার প্রমুখ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, মর্জিনা বেগমের স্বামী ইসমাইল হোসেন মালয়েশিয়ায় থাকেন। তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো আটক নুর আলমের। বিষয়টি জানতেন আটক মোশারফ হোসেন। তিনিও মর্জিনা বেগমকে কাছে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাত্তা পাননি। এরই মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ইসরাফিল হোসেন প্রতিনিয়ত নানাভাবে ডিস্টার্ব করায় মর্জিনা বেগম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। দু দফা এলাকায় এ নিয়ে শালিস হলেও ইসরাফিল হোসেনকে নিবৃত্ত করা যায়নি। তারওপর আবার ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলায় পথের কাঁটা সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন মর্জিনা বেগম। তিনি এ জন্য শেষ পর্যন্ত মোশারফ হোসেনের সাথে ‘সম্পর্ক স্থাপনে’ সাড়া দেন এবং হত্যা করার জন্য তাকে দেড় লাখ টাকা দিতে রাজি হন।
ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ইসরাফিল হোসেন, মোশারফ হোসেন, নুর আলম ও ঘরজামাই মেহেদী ৪ জনই মাদকসেবী। তারা একসাথে বসে নিয়মিত গাঁজা ও ইয়াবা সেবন করতেন। একদিন মাদকের আসরে ইসরাফিল হোসেনকে হত্যা এবং এর বিনিময়ে দেড় লাখ টাকা পাওয়া যাবে বলে মেহেদী ও নুর আলমকে কৌশলে জানান মোশারফ হোসেন। এতে মেহেদী ও নুর আলম সাড়া দেন। ইসরাফিল হোসেন মাদক সেবনের পাশাপাশি ব্যবসাও করতেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে মাদক সেবনের প্রস্তাব দিয়ে ইসরাফিল হোসেনকে ১০টি ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে মোড়লবাড়ির বড় কবরস্থানে যেতে বলেন নুর আলম ও মেহেদী। রাত নয়টার দিকে ৯ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও দুই পুরিয়া গাঁজা নিয়ে যান ইসরাফিল হোসেন। সেখানে ইসরাফিল হোসেন গাঁজা এবং মেহেদী ও নুর আলম ইয়াবা সেবন করেন। এরই এক ফাঁকে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাছে থাকা গামছা ইসরাফিল হোসেনের গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মেহেদী। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তারা দুজনে পরে তার বুকের ওপর কিছু সময় বসে থাকেন। দুই ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়ার পর মেহেদী ও নুর আলম বাড়ি ফিরে যান। পরে কোদাল নিয়ে ফের কবরস্থানে যান তারা। এরপর একটি ভাঙা কবর খুঁড়ে তার মধ্যে নিহত ইসরাফিল হোসেনের লাশ মাটিচাপা দেন এই দুজন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দেড় লাখ টাকা চুক্তি হলেও মর্জিনা বেগম কোনো টাকা পয়সা দেননি। কিন্তু এরই মধ্যে ধরা পড়ে যান মর্জিনা বেগম, নুর আলম ও মোশারফ হোসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটক তিন জনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে এর মধ্যে নুর আলম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গৌতম মল্লিক তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এছাড়া একই আদালতে অপর দুজনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে তাদের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন।