মোবারকগঞ্জ চিনিকল: এক কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ ১২৩, বিক্রি ৬৩ টাকা!

0

শিপলু জামান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ॥ ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলে (মোচিক) বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে ঋণের বোঝা। তবে সূত্র বলছে, লোকসান কমিয়ে লাভের মুখ দেখতে হলে কারখানার যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন, শূন্য পদে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ, ঋণ ও সুদ মওকুফ, আখের জাত উন্নয়ন ও বিকল্প শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে।
মোবারকগঞ্জ চিনিকলে উৎপাদন ও বিপণন বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিলগেটে এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা। সেই একই চিনি মিলগেটের বাইরে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৮০ টাকায়। ফলে চিনির বাজার দিনে দিনে সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চিনির দাম আরো বাড়বে বলেও আশঙ্কা ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের। দাম বাড়লে চিনি সংশ্লিষ্ট খাদ্য পণ্যের দামও বাড়বে বলছেন ব্যবসায়ীরা।মোবারকগঞ্জ চিনিকল কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২০-২০২১ আখ মাড়াই মৌসুমে ৬৩ টাকায় বিক্রিত এক কেজি চিনি উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১৮২ টাকা। এই এক কেজি চিনিতে ব্যাংক সুদ রয়েছে ৫৯ টাকা। আর সুদ বাদ দিয়ে এক কেজি চিনি উৎপাদন খরচ হয়েছে ১২৩ টাকা। এ মাড়াই মৌসুমে মিলটি চিনি উৎপাদন করে ৭ হাজার ৮৬২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মিল গোডাউনে এখনো অবিক্রিত রয়েছে ২ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন চিনি। এই পরিমাণ চিনি উৎপাদন করতে মিলের লোকসান দিতে হয়েছে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা। আর মোট লোকসানের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ব্যাংক সুদ রয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
এর আগের বছর ২০১৯-২০২০ আখ মাড়াই মৌসুমে এ লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ফলে শেষ বছর ২০২০-২০২১ মৌসুমে লোকসানের পরিমাণ কমেছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ওই বছর এক কেজি চিনিতে উৎপাদন খরচ পড়েছিল ১৯৩.৫৮ টাকা। তখন মিলগেটে চিনির বিক্রি মূল্য ছিল ৬০ টাকা। এই ৬০ টাকায় বিক্রিত এক কেজি চিনি উৎপাদন করতে মিলটির সুদ গুনতে হয়েছিল ৬৯.৫৮ টাকা।মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের কিছুই করার নেই। মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের। আমরা শুধু নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করি।’ মিলের লোকসান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরাতন যন্ত্রপাতি, কৃষক পর্যায়ে আখের মূল্য বৃদ্ধি, জনবল সঙ্কট, শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সঙ্গতিহীন চিনির মূল্য নির্ধারণের ফলে লোকসান বাড়ছে। সাথে মোটা অংকের ব্যাংক ঋণের সুদ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ। তবে, উৎপাদন খরচ বেশি হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর এই খাদ্য পণ্যটি জনসাধারণের মধ্যে সহনীয় রাখতেই সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করছে। তিনি বলেন, মিলটি লাভজনক করতে হলে চিনি উৎপাদনের সাথে সাথে বিকল্প শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। দীর্ঘদিনের জমে থাকা মোটা অঙ্কের সুদ মওকুফ ও আখের জাত উন্নয়ন করতে হবে।