যশোরে নওয়াপাড়া ইউপি চত্বরের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের সামনে নির্মাণ কাজ নিয়ে অসন্তুষ্টি # চেয়ারম্যান বললেন, তিনি কিছু জানেন না, জানেন তার স্বামী

0

মাসুুদ রানা বাবু ॥ যশোর শহরতলীর হাইকোর্ট মোড়ে অবস্থিত সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের সামনে নির্মাণ কাজ নিয়ে চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন সেখানে প্রাচীর দেওয়ার নামে দোকান ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা খুশি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি জানেন না, জানেন তার স্বামী। চেয়ারম্যানের স্বামী শহিদুল ইসলাম মিলন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে অ্যাড. রবিউল আলম উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এই বাস্কেটবল গ্রাউন্ডটি নির্মাণ করা হয়। যেটি সদর উপজেলা বাস্কেটবল গ্রাউন্ড নামে পরিচিত। তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত বিমল রায় চৌধুরী। তিনি বাস্কেটবল খেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বজায় রেখে গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেন। সেই থেকে ইউনিয়ন পরিষদের ১০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত গ্রাউন্ডে বাস্কেটবলের পাশাপাশি, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে এই তিনটি খেলার টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ইউনিয়নবাসী সেখানে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ, মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, ওই স্থানটি ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আবার স্থানীয় সালিশ বৈঠকসহ সন্ধ্যাকালীন সময় অনেকে মুক্ত মনে চায়ের আড্ডা দিয়ে থাকেন। কিন্তু ইউনিয়নবাসীর এই প্রাণের জায়গাটিতে নির্মাণ কাজে দলমত নির্বিশেষে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ইউনিয়নে সাময়িক বিনোদন কিংবা, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার এ স্থান ছাড়া বিকল্প কোন জায়গা নেই। এই জায়গাটি তাদের জন্যে খুবই প্রয়োজন। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের ওপর মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, তাদের বলা হচ্ছে সেখানে প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। মূলত সেই উদ্দেশ্যে মাটি খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু তারা বলছেন, প্রাচীরের আদলে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করা হবে। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, সেখানে প্রাচীর দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। প্রাচীর দেয়া হলেও আগের মত কোন কার্যক্রম চালানোর সুযোগ থাকবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি সদস্য জানান, সেখানে প্রাচীর নির্মাণ সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদে কোন আলোচনা হয়নি। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে এই জাতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক।
বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওখানে যে কাজটি করা হচ্ছে তা আদৌ ঠিক হচ্ছে না। তাদের মনগড়া কাজ থেকে সরে এসে জনগণের স্বার্থে কাজ করা উচিত। যশোরের বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক হযরত আলী বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক এবং পীড়াদায়ক যে, ছেলেদের খেলার মাঠ দখল হয়ে যাবে। তারা খেলা থেকে বঞ্চিত হবে।
বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের পাশে অবস্থিত শেখহাটি তরুণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, এখানে প্রাচীন দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ, এর সাথে কোন প্রকার নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত নয়। প্রাচীর দিলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাজী আলমগীর হোসেন আলম বলেন, প্রাচীরের কথা বলে ওখানে দোকান ঘর নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা খুশি বলেন, সেখানে প্রাচীর নাকি দোকান ঘর নির্মাণ করা হবে সেটি আমি জানি না। আমার স্বামী জানেন। উনিই ইউনিয়নের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। আমি উনার কাছ থেকে শুনে আপনাকে জানাবো। অভিযোগের বিষয়ে শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ওখানে কোন দোকান ঘর করার পরিকল্পনা নেই। প্রাচীর দেয়া হচ্ছে গরু-ছাগলের হাট বসে তাই। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নিরাপত্তার বিষয়টি তো আছেই। সে কারণে সরকারি অর্থায়নে সেখানে প্রাচীর দেয়া হচ্ছে।