সংবাদ সম্মেলনে পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি: সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দ্রুত ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান দাবি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের দাবিতে আবারও সোচ্চার হচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। অবিলম্বে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সংকট নিরসনে বিল কপালিয়ায় টিআরএম (টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট জোয়ারাধার) চালু করে নদী রক্ষা, হরি নদ ও শ্রী নদীতে পড়া পলি অপসারণ, পলিতে ভরাট হওয়া টেকা ও মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার, আমডাঙ্গা খাল প্রশস্থ ও গভীর করার এসব কাজ করার দাবি জানিয়েছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। মঙ্গলবার যশোরের নীলরতন ধর রোডে অবস্থিত সংগ্রাম কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভবদহ জনপদের ২০০ গ্রামের প্রায় ১০ লাখ মানুষ একটি মহলের লুটপাটের শিকার হয়ে পানির তলিয়ে যেতে বসেছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কিন্তু ওই চক্র এতই ক্ষমতাবান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। ফলে ভবদহ স্লুইচ গেট থেকে মোহনা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে গেছে। এতে পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিণতির কথা বারবার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্ণপাত করছে না। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকার আয়োজিত এক কনভেনশনে নীতিগতভাবে পর্যায়ক্রমের বিলগুলোতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালে বিল কেদারিয়ায় এবং পরবর্তী বিল হিসেবে ২০০৬ সালে বিল খুকশিয়ায় টিআরএম এর সফলতায় ¯্রােতের ভরবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত নদীগর্ভের পলি কেটে কাট পয়েন্ট থেকে নদী ২৫ থেকে ৩০ ফুট গভীর ও মোহনা সচল হয়েছিল। পরবর্তী নির্ধারিত বিল কপালিয়ায় টিআরএম কার্যকর করতে গেলে দুর্বৃত্তদের আক্রমণে হুইপ ও পাউবোর কর্মকর্তারা আহত হন এবং সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে সরকার টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে দেয়। সংবাদ সম্মেলনে আরফ বলা হয়, এ ঘটনার পর পুনরায় আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী, কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জাতীয় কর্মশালা হয়। কর্মশালায় জরিপ ও জনমত যাচাই করে প্রস্তাবিত বিল কপালিয়া ও পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাতিল করে। পরে পাউবো জনমত যাচাই করার নীতি লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ৮০৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করে, যা জনগণের আন্দোলনের মুখে স্থগিত রয়েছে।
২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাউবোর আহ্বানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্থানীয় আন্দোলনকারী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদেও নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল, বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন এবং সেচপাম্প দিয়ে পানি বের করার প্রস্তাব পাস হয়। দুঃখজনক হলো আজও পর্যন্ত পানি সেচ বাদে আর একটি সিদ্ধান্তও কার্যকর হয়নি। তবে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাটে ৫০ কোটি টাকার সেচ প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্রুত টিআরএম চালু ও আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত করে সংস্কার করা না হলে ওই ২০০ গ্রামের মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পানিবন্দী হবে। এলাকার হাটবাজার, বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ-মন্দির পানিতে তলিয়ে যাবে। তাই সমস্যা নিরসনে বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করে নদী রক্ষা, হরি নদ ও শ্রী নদীতে পড়া পলি অপসারণ, পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া টেকা ও মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার, আমডাঙ্গা খাল প্রশস্থ ও গভীর করা, আমডাঙ্গা খালের পূর্ব পাশে দুই পাড়ে স্থায়ী টেকসই প্রাচীর নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ সব কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কার্যকর করা এবং আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোকে কাজ তদারকির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। দাবি আদায়ে আগামী ২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ ও সদস্যসচিব চৈতন্য কুমার পাল, সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু, তসলিমুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র মল্লিক, শিবপদ বিশ্বাস, রাজু আহমেদ, শিশির মন্ডল, আবদুল মজিদ, অমিতাভ মল্লিক কিংকর বিশ্বাস, রবি মল্লিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।