করোনাকালে শিশুদের খাবার দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে কৃষকের রান্নাঘর

0

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের দরিদ্র শিশুদের মুখে প্রতিদিন এক বেলা দুপুরে খাবার দিচ্ছে কৃষকের রান্নাঘর। মহামারি করোনাকালীন বিধিনিষেধে কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারের ৫০টি শিশুকে দুপুরে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো ব্যবস্থা করেছেন বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি ও অমর্ত্য ফাউন্ডেশন। বাগেরহাট সদর উপজেলার পিসি ডেমা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা খালেদা বেগম। করোনাকালীন সময়ে ঘরের বারান্দায় সুঁই-সুতা নিয়ে কাথা সেলাই করছিলেন। তারই দুই নাতনি প্রতিদিন দুপুরে পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন কৃষক সমিতির নেতা শেখ তানজিমের বাড়িতে। মহামারির এই সময়ে প্রতিদিন দুপুরে তার নাতনিদের সুষম খাবার দেয়ায় খুশি তিনি। শুধু খালেদা বেগম নয়, এই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অর্ধশত শিশু প্রতিদিন দুপুরে খাবার খেতে পেরে খুশি তারা।
ডেমা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের শিশুদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন ২৪ জুন থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষকদের এই উদ্যোগের কথা জেনে আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফজলুল বারীর অমর্ত্য ফাউন্ডেশন। অমর্ত্য ফাউন্ডেশনের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। অজপাড়াগায়ের কৃষক শেখ তানজিমের বাড়িতে সকাল থেকে পাঁচজন নারী স্বেচ্ছাশ্রমে রান্নার কাজ করেন। দুপুর দুটো বাজার সাথে সাথে শিশুদের খাবার পরিবেশন করা হয়। কখনো পোলাও, কখনো খিচুড়ি, কখনো সাদা ভাতের সাথে ডিম, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস থাকে খাদ্য তালিকায়। এ কাজে সহযোগিতা করতে পেরে খুশি নারীরা। রবিবার (১৫ আগস্ট )কার্যক্রমের ৫০ তম দিনে সরেজমিনে কৃষক শেখ তানজিমের বাড়িতে দেখা যায়, ৫৫ জন শিশুর সাথে দুইজন বৃদ্ধ খাবার খাচ্ছিলেন আনন্দমুখর পরিবেশে। কৃষকের রান্নাঘরে খাবার খেতে আসা আলিফ নামের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বাড়িতে এত ভালো খাবার খেতে পারি না। এখানে সবাই মিলে একসাথে খাবার খাই। খুব ভালো লাগে’। ভ্যানচালক হাফিজুর রহমানের ছেলে রবিউল বলেন, ‘করোনার মধ্যে একদিন এই বাড়ির কাকা আমারে ডাইকে নিয়ে আইসে দুপুরের খাবার দেয়। এরপর থেকে দুপুর হলেই আমি প্রতিদিন এখানে চলে আসি। মজা করে খাবার খাই। শুধু রবিউলই নয় অনেক দরিদ্র পরিবারের শিশুরা এই কৃষকের রান্নাঘরে এসে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে’।
প্রতিবেশী শাজাহান আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামে যে উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে, সব এলাকাতে যদি এ ধরনের উদ্দ্যেগ নেওয়া হয় তাহলে কোনো শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে না।
উদ্যোক্তা কৃষক শেখ তানজিম তানজু বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আমাদের গ্রামের কৃষকরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। সন্তানদের নিয়ে কোনোমতে চলে তাদের জীবন যাপন। এই অবস্থায় কৃষকদের সন্তানদের একবেলা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের উদ্যোগের কথা ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী ফজলুল বারীর সংগঠন অমর্ত্য ফাউন্ডেশন আমাদের পাশে দাঁড়ায়। গত ২৪ জুন থেকে গ্রামের অসহায় পরিবারের ৫০টি শিশুকে নিয়ে দুপুরের খাবারের আয়োজন করি। প্রতিদিন খাবারে আমাদের দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়।’ করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া
পর্যন্ত এলাকাবাসী ও বিত্তবানদের সহায়তায় এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আশা প্রকাশ করেন তিনি। ডেমা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই। তাদের নেই কোনো কথা বলার জায়গা। আমরা গ্রামের কৃষকরা উদ্যোগ নিয়ে এই সংগঠন গড়ে তুলি। করোনাকালীন সময়ে কৃষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাচ্চাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করি। শুধু খাবার দিয়েই নয়, আমরা শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায় ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অমর্ত্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ও ডেমা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির আয়োজনে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাদের এই কর্মকান্ডকে স্বাগত জানাই। এ ধরনের কার্যক্রমে আরো অনেক মানুষ এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।