গৃহকর্মী শিশুর ওপর নির্মম নির্যাতন গৃহকত্রী আটক, পালিয়েছেন কর্তা

0

শহিদুজ্জামান চাঁদ, শালিখা (মাগুরা) ॥ মাগুরায় এক শিশু গৃহকর্মীর ওপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় গৃহকর্তা পালিয়ে যান। শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বছর দুয়েক আগে মানসিক ভারসাম্যহীন বাবা ও শিশু আকলিমাকে (১১) ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান মা। কিছুদিন পর বাবাও নিরুদ্দেশ হন। এরপর শিশুটি দাদা-দাদির আশ্রয়ে ছিল। কিন্তু অভাবের তাড়নায় দেড় বছর আগে এক প্রতিবেশীর সন্তানকে দেখাশোনার জন্য ঢাকার বাসায় কাজ করতে পাঠানো হয় আকলিমাকে। সেখানে এই দেড় বছরে প্রতিনিয়ত অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয় শিশুটি। কারণে-অকারণে তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। রাতভর বাথরুমে আটকে রাখা হতো তাকে।
মাগুরা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিছানায় শুয়ে করুণ কন্ঠে নিজের ওপর নির্যাতনের এমনই বর্ণনা দিচ্ছিলো আকলিমা। সারা গায়ে আঘাতের ক্ষত চিহ্ন আর কঙ্কালসার শরীর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। আকলিমার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বাহারবাগ গ্রামে। সে ওই গ্রামের কুবাদ শেখের মেয়ে। শিশুটির দাদা তজলু শেখের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই অভিযুক্ত বাবু শেখের মাগুরা কলেজ পাড়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী লিপি বেগমকে আটক করে পুলিশ । আকলিমার দাদা সাংবাদিকদের বলেন, অভাবের কারণে নাতনির ভরণপোষণ ও ভবিষ্যতে বিয়ের দায়িত্ব গ্রহণের কথা বলায় বাবু শেখের কাছে কাজে দিয়েছিলেন শিশু আকলিমাকে। নির্মম এ নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের সহায়তায় গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী লিপি খাতুনের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার মাগুরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল আহসান জানান, তার শরীরে দীর্ঘদিন ধরে চলা নির্যাতনের একাধিক চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটি অভুক্ত থাকায় চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে বলেও জানান তিনি। অভিযুক্ত লিপি খাতুনের স্বামী বাবু শেখ শিশুটির ওপর নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল আলম জানান, শিশুটির দাদার করা অভিযোগ পেয়ে রাতেই অভিযুক্ত গৃহকত্রী লিপি খাতুনকে মাগুরার কলেজ পাড়ার বাসা থেকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর অভিযুক্ত গৃহকর্তা বাবু শেখ পলাতক রয়েছেন। বাবু শেখ কলেজ পাড়ার বাসিন্দা মৃত মশিউর রহমান বকুলের ছেলে। ওষুধ কোম্পানিতে চাকরির সুবাদ তিনি ঢাকার মিরপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন।