করোনা রোগী কমছে, তবে…

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবের পর সংক্রমণ হার কিছুটা কমতির দিকে। এ বছরের জুলাই মাসে দেশে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার উঠেছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এরপর আগস্টের শুরু থেকে করোনার রোগী শনাক্ত ধীরে ধীরে কমছে। কিন্তু সেই তুলনায় মৃত্যু কমছে না। শনাক্তের হার গতকাল এসে দাঁড়িয়েছে সোয়া ২০ শতাংশে। মৃত্যু ও শনাক্ত এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি। সরকারের তাড়াহুড়ো করে লকডাউন তুলে নেয়ায় বা শিথিলতায় উদ্বেগ এবং সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পরামর্শ কমিটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন দেশে লকডাউন থাকায় এর সুফল এটি। সংক্রমণ আরও কমবে যদি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানে এবং করোনার টিকার আওতা আরও বাড়ানো যায়। এটা না করতে পারলে সংক্রমণ আবারো বাড়বে।
এ বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ গত বছরও এই সময় বেশি ছিল। পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এ বছরও আমরা দেখছি। জুন-জুলাই মাসে সংক্রমণ অত্যন্ত বেশি ছিল। আগস্টে এসে তা কমতে শুরু করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সংক্রমণ হার ধীরে ধীরে কমে আসবে। এবছর মানুষকে টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকার আওতায় মানুষকে আরও বেশি আনতে হবে। এ ছাড়া মানুষ যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানে তাহলে সংক্রমণ কমবে দ্রুতই। তিনি আরও জানান, জানুয়ারিতে এসে আমাদের দেশে সংক্রমণ হার অনেক কমে গিয়েছিল। কেন জানুয়ারিতে বেশি কমেছিল তার একটা গবেষণা হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, করোনার কারণে দেশে দীর্ঘদিন লকডাউন ছিল। এর প্রভাবে করোনার সংক্রমণ আস্তে আস্তে কমে আসছে। আশা করি আগস্টের শেষে আরও সংক্রমণের হার কমবে। তিনি আরও বলেন, মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি মানে এবং আরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায় তাহলে সংক্রমণ দ্রুত কমবে। তবে সংক্রমণ যদি ৩ সপ্তাহ শূন্যের পর্যায়ে থাকে তখন বলা যাবে করোনা নাই। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সম্প্রতি সরকারের তাড়াহুড়ো করে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল বা কমানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সংক্রমণ বাড়ারও আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, দেখেন করোনার জন্য সবাইর উদ্বেগ রয়েছে। ৫-এর নিচে না নামা পর্যন্ত আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। এখন মূল পয়েন্ট হলো করোনার সংক্রমণ শূন্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে গত একদিনে করোনা শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ এসে ঠেকেছে। আগের দিন এই হার ছিল ২০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ১৩ই আগস্ট ছিল শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ১২ই আগস্ট শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি আগস্ট মাসের শুরু থেকেই করোনার শনাক্তের হার আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ১লা আগস্ট একদিনে শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেটা গত দুই সপ্তাহে কমে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৫ শতাংশে এসেছে। এবছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে আস্তে আস্তে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়। বাড়তে থাকে শনাক্তের হার। এরপর এবছরের ২৪শে জুলাই শনাক্তের ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশে উঠে। এটাই এ এযাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ। এরপর আস্তে আস্তে আবার কমতে থাকে শনাক্তের হার। দেশে করোনার প্রথম শনাক্তের পর ১০ মাস পর শনাক্তের হার কমে ৪-এর নিচে নেমেছিল। গত বছর সর্বোচ্চ একদিনে শনাক্তের হার উঠেছিল ৩রা আগস্ট ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। তা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় একদিনে করোনা শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ নামে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে চলতি আগস্ট মাসের ১৫ দিনে করোনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৪৯০ জন এবং শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৮ জন। দেশে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪ হাজার ১৭৫ জন। তবে করোনার চেয়ে উপসর্গ নিয়ে দ্বিগুণ রোগী মারা যাচ্ছেন, যাদের হিসাব সরকারি তালিকায় উঠছে না। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৯০২ জন। প্রসঙ্গত, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ই মার্চ আর প্রথম ভাইরাসটিতে মারা যায় ওই বছরের ১৮ই মার্চে।