ঝিনাইদহে গণটিকায় গণহয়রানি!

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ॥ রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা বেশি এবং টিকার সরবরাহ কম এমন পরিস্থিতি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে শনিবার গণটিকা কার্যক্রমে গণহয়রানির সৃষ্টি হয়। প্রথম দিনেই মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে নাজেহাল হয়। টিকা রেজিস্ট্রেশন করার সময় ভুল তথ্যের কারণে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে এসে ভোগান্তিতে পড়েন। তারা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ কিছুক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন জানান, টিকা রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুল করে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস উল্লেখ করা হয়। সকালে তিনি টিকা গ্রহণের জন্য হলিধানী ইউনিয়ন টিকাদান কেন্দ্র ছেড়ে চলে আসেন শহরে। কিন্তু কোথাও তিনি টিকা পাননি। ইউনিয়নে গেলেও কেন্দ্র দেখে তাকে আবার ঝিনাইদহে আসতে বলা হয়। এভাবে লোকমান হোসেন হয়রানির শিকার হন। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার মুরারীদহ গ্রামের আবুল হাসেম জানান, তার রেজিস্ট্র্রেশন কার্ডে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিস উল্লেখ করা হয়। সদর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দফতর থেকে তাকে পাঠানো হয় সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে আবারো তাকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দফতরে পাঠানো হয়। এভাবে তিনি রিক্সাভাড়া দিয়ে কয়েকবার যাতায়াত করে হয়রানির শিকার হয়ে জানতে পারেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিসে কোনো টিকা দান কেন্দ্র নেই। এমনভাবে রেজিস্ট্রেশনে কেন্দ্র সঠিক ভাবে উল্লেখ না থাকায় শত শত নারী পুরুষকে হয়রানি হতে হয়। ইউনিয়ন ও শহরের সবখানে একই চিত্র ছিল। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গ্রামও শহরের হাজার হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। প্রথম দিনে প্রতিটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয় ৬শ জনের, ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ রেজিস্ট্র্রেশন করেও টিকা নিতে পারেনি।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মান্দিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শমসের মন্ডল ও কালাপাড়িয়া গ্রামের শেফালী বেগম শুধুমাত্র ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে আসেন টিকা নিতে। কিন্তু তাদের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় গণটিকার আওতায় টিকা দেওয়া হয়নি। শৈলকূপার মির্জাপুর ইউনিয়নেও অনেক মানুষকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নে টিকা নিয়ে তর্কবিতর্ক হতে দেখা গেছে। প্রায় সব কেন্দ্রেই একই অবস্থা বিরাজমান।
সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছিল, কিন্তু টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ৭শ জনকে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ডা. শামীম কবীর বলেন, রেজিস্ট্রেশন বেশি কিন্তু টিকার সরবরাহ কম হওয়ায় প্রথম দিনে একটু ভিড় হয়েছে। তিনি বলেন, আমার অফিসে কোন টিকাদান কেন্দ্র নেই অথচ রেজিস্ট্র্রেশনে কেন্দ্র উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। জেলার সিভিল সার্জনের দফতর থেকে বলা হয়েছে, শনিবার জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভায় ৭৩টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব কেন্দ্রে ৬শ জন করে সর্বমোট ৪৩ হাজার ৮শ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময় থাকলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে দুপুরের আগেই টিকা শেষ হয়ে যায়।