বাগেরহাটে পাওয়া গেল বিলুপ্ত প্রায় ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ প্রজাতির নীল রক্তওয়ালা বিস্ময়কর রাজকাঁকড়া

0

আলী আকবর টুটুল. বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের একটি মৎস্য ঘেরে বিলুপ্ত প্রায় এবং জলজ প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছে বিস্ময়ের ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ প্রজাতির রাজ কাঁকড়া পাওয়া গেছে। রামপাল উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের আমানুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মৎস্য ঘেরে এই কাঁকড়াটি পাওয়া যায়। কাঁকড়াটি জোয়ারের পানিতে সাগর থেকে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছে মৎস্যবিভাগ। অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের কারণে সংকটাপন্ন প্রজাতির এই কাঁকড়াটিকে ফরমালিন দিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল। ওই কর্মকর্তার মতে, নীল রক্তওয়ালা এজাতীয় কাঁকড়া সাড়ে ৪৪ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, অশ্বক্ষুরের ন্যায় দেখতে উপবৃত্তাকার এই কাঁকড়াটির ইংরেজি নাম গধহমৎড়াব ঐড়ৎংবংযড়ব ঈৎধন। এর বৈজ্ঞানিক নাম পধৎপরহড়ংপড়ৎঢ়রঁং ৎড়ঃঁহফরপধঁফধ। এটি রাজ কাঁকড়া হিসেবে অধিক পরিচিত। এটিকে কাঁকড়া বলা হলেও প্রজাতিগত দিক থেকে মাকড়সার সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে । এরা লিমুলিডি গোত্রের অন্তর্গত সামুদ্রিক সন্ধিপদী প্রাণী। এরা প্রধানত অগভীর সমুদ্র ও নরম বালি বা কাদা সমৃদ্ধ সমুদ্রতলে বাস করে। কালেভদ্রে ডাঙায় আসতে দেখা যায়।
তিনি জানান, জন্মের সময় সাত থেকে আট সেন্টিমিটারের এই প্রাণিটি প্রায় ৮ বছর কাদা মাটি বা নরম বালুর নিচে থাকে। ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে তারা অগভীর সমুদ্রে চলে যায়। পরিপক্ক অবস্থায় এটি ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর মাথায় একটি সুড়ের মত অঙ্গ রয়েছে। এর খোলস বেশ শক্ত। এই কাঁকড়ার নীল রক্ত বহুমূল্যবান। এই রক্তের অসাধারণ ক্ষমতা বলে লিমিউলাস বা অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়া যে কোনো ধরণের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে এদের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি আরও বলেন, রাজ কাঁকড়া সাধারণত আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। ৩১ জুলাই আমানুল্লাহর মাছের ঘেরে পাওয়া এই কাঁকড়াটি সংগ্রহ করি। এটি এখন মৃত প্রায় অবস্থায় রয়েছে। এটি মারা গেলে আমরা ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখব। ধারণা করছি কাঁকড়াটি সমুদ্র থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে।
মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, এই কাঁকড়াকে জীবন্ত জীবাশ্মও বলা হয়, কারণ ৪৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল। ডাইনোসরের চেয়েও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিলো এই লিমুলাস। তাই এই জলজ প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছে আজও বিস্ময়ের।