খুলনায় ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়নি

0

মো.জামাল হোসেন,খুলনা॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনো প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়নি খুলনা জেলার ইউনিয়নগুলোতে। তবে, টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে গত ১ আগস্ট থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভ্যাকসিনেটরদের ট্রেনিং শুরু হয়েছে।
খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনো প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়নি ইউনিয়নগুলোতে। তবে, টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে গত ১ আগস্ট থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভ্যাকসিনেটরদের ট্রেনিং শুরু হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সভাপতিত্বে জুম মিটিং করা হচ্ছে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন। এই জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে টিকা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলায় ৬৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশের মতো আগামী ৭ আগস্ট থেকে উক্ত ইউনিয়নগুলোতে করোনার টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে ইউনিয়নগুলোতে কোনো প্রস্তুতি শুরু হয়নি। তবে, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী দু-একদিনের মধ্যেই টিকা দেওয়ার সকল প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
দাকোপ উপজেলার পানখালী গ্রামের ষাটোর্ধ গুরুদাস রায় বলেন, ‘উপজেলা-ও জেলা সদরে যাতি হবে বলে এতদিন করোনার টিকা নিয়া হয়নি। তবে, এখন শুনছি, প্রত্যেক ইউনিয়নে করোনার টিকা দিয়া হবে। যেহেতু বাড়ির কাছে দিয়া হবে, এবার আমি করোনার টিকা নেব। এজনি সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করাইছি।’
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, ইউনিয়নপর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। এছাড়া কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ^াসের সভাপতিত্ব গতকাল সোমবার জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালাসহ উপজেলার সাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা অংশগ্রহণ করেন।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা বলেন, করোনার টিকা প্রদানের ব্যাপারে আমরা সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সভাপতিত্বে জুম মিটিং করেছি। এতে ৭টি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আগামী ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত তিনটি করে তিনদিন ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নগুলোতে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনও শুরু হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই প্রতিরোধ কমিটির তত্ত্বাবধানে মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এক একটি ক্যাম্পে প্রতিদিন ২০০জন করে মোট ৬০০জনকে টিকা দেওয়া হবে। এভাবে প্রতিদিন ৭টি ইউনিয়নে মোট ৪ হাজার ২০০জনকে টিকা দেওয়া হবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে টিকা সরবরাহের ওপর। টিকা সরবরাহ যদি বেশি থাকে তাহলে আরো বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এজন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি নেওয়া আছে। এখন শুধু টিকা আসার অপেক্ষা।
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ সুফিয়ান রোস্তম জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়ার ব্যাপারে এখনো প্রাথমিক নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু হবে। তবে এ ব্যাপারে গত রবিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য নারায়ণচন্দ্র চন্দের নেতৃত্বে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি জানান, এখনো ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো টিকা এসে পোঁছায়নি। তবে, আশা করা হচ্ছে, আজকালের মধ্যে টিকা এসে পৌঁছাবে। তারপর এ ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু করা হবে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপরে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে গত ১ আগস্ট থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভ্যাকসিনেটরদের ট্রেনিং শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ৫-৬ তারিখের মধ্যে সব টিকা খুলনায় এসে পৌঁছাবে। তবে, প্রয়োজন অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।