বাগেরহাটে পানিবন্দি অর্ধলাখ পরিবার ভেসে গেছে দু’সহ¯্রাধিক মাছের ঘের

0

আলীআকবর টুটুল, বাগেরহাট ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে উপকূলীয় এলাকার অর্ধলাখ পরিবার। ভেসে গেছে দুই সহ¯্রাধিক মৎস্য ঘের। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বর্ষাকালীন সবজিরও। রাতের ঝড়ো বাতাসে উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছ। কাঁচা-পাকা সড়কও ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে। গত ২৪ ঘন্টায় শরণখোলা উপজেলায় সর্বোচ্চ ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৮৬ দশমিক ২২ মিলিমিটার।
বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানজাহান পল্লী গোবরদিয়া, কাড়াপাড়া, খানপুর, নাগেরবাজার, সাহাপাড়া, হাড়িখালি-মাঝিডাঙ্গা আশ্রায়ণ প্রকল্পসহ বাগেরহাট শহরের বেশ কয়েটি সড়কের ওপর এক থেকে দেড় ফুট পানি দেখা যায়। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতেই এই অবস্থা বলে দাবি করেছেন অনেকে। অন্যদিকে শরণখোলার খুড়িয়াখালী, সাউথখালী, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, চন্দ্রপাড়া, রাড়িপাড়া, পদ্মনগর, ভান্ডারকোলা, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা, শানকিভাঙ্গা, চিংড়াখালীসহ অসংখ্য এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। রান্না-খাওয়াও বন্ধ রয়েছে পরিবারগুলোর। এছাড়া ভেসে যাওয়া ঘেরের মাছ বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজেই শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন মাছ চাষিরা।
রামপাল উপজেলার পেড়িখালি এলাকার মোতাহার হোসেন বলেন, দু’দিনের বৃষ্টিতে এলাকার মানুষের ঘের-পুকুর সব তলিয়ে গেছে। নেট ও মাটি দিয়েও রাখা যায়নি। বন্যায়ও এত পানি দেখা যায় না। বাইনতলা এলাকার মোহসিন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমাদের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। আমার পাঁচ বিঘা ঘেরের সকল মাছ বের হয়ে গেছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপকভাবে।
রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, গত বুধবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে আকস্মিক ঝড় হয়। এতের উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দশটি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন বলেন, বৃষ্টিতে ঘেরের পাড় এবং ভিটায় সব জায়গায় পানি উঠে গেছে। শসা, ঢেঁড়স, পেঁপে, লাউসহ সবধরনের গাছের গোড়ায় পানি রয়েছে। এভাবে দু’একদিন থাকলে সকল শিকড় পঁচে যাবে। পানি কমার সাথে সাথে, রোদ উঠলেই এসব গাছ মারা যাবে। এই বৃষ্টিতে আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে আমাদের।
শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদীর চরে গুচ্ছগ্রামের মানুষজন মঙ্গলবার রাত থেকেই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তাদের রান্না-খাওয়া একরকম বন্ধ। শুকনো খাবারেই চলতে হচ্ছে তাদের। তারা সরকারের কাছে রান্না করা খাবার প্রদানের দাবি জানান। শরণখোলার সাউথখালী এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, আম্পান ঘূর্ণিঝড়কে হার মানিয়েছে এই বৃষ্টি। এত বেশি পানিবন্দি মানুষ এক সাথে কখনও দেখিনি। কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর মোল্লা মোতাহার বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। গাছপালা পড়ে গেছে অনেকের। ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পদ্মনগর থেকে নরেন্দ্রপুর যাওয়ার রাস্তাটিও ডুবে গেছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি আমরা। এদিকে শরণখোলা উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, শরণখোলা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা পানিবন্দি মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। লোকালয়ের পানি নামানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, শুধু আমার উপজেলায়ই ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। উপজেলার অন্তত ৯০ শতাংশ জায়গা এখন পানির নিচে রয়েছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পানিবন্দিদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করছি। তবে পানিবন্দি লোকদের আরও বেশি সহযোগিতার প্রয়োজন। এ জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়ার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধলাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে সবধরণের সহযোগিতা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।