যশোরে করোনায় ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু জুলাইয়ে

0

বিএম আসাদ ॥ মহামারী করোনায় জেলায় ১৭ মাসের মধ্যে চলতি জুলাই মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। আবার জেলায় মৃত করোনা রোগীদের মধ্যে সিংহভাগের মৃত্যু হয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। এছাড়া করোনায় উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আরও প্রায় ৩শ’ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে (রেডজোন) ১ হাজার ৬শ’ ৫১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসাধীন রোগীদের ভেতর ২শ’ ৫২ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৩শ’ ৯৯ জন করোনামুক্ত রোগী। ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড বা রেডজোন চালু করা হয়েছিলো। রেডজোন চালু করার পর ১১ মাসে হাসপাতালে ৭২শ’ ৫২ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা যান। এর ভেতর এ যাবতকালের সকল রেকর্ড ভেঙে চলতি জুলাই মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ মাসের গতকাল পর্যন্ত (২৯ জুলাই) ১শ’ ৭৫ জন করোনা রোগী মৃত্যুবরণ করেছে। ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে যশোরে করোনা শনাক্ত হতে থাকে। এর পরই শুরু হয় রোগীদের মৃত্যুর পথে যাত্রা। করোনায় মৃত্যুর মিছিলে গতকাল পর্যন্ত যশোর জেলায় ৩শ’ ৩৪ জন মুক্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯-এ মৃত ৩শ’ ৩৪ জনের ভেতর ২শ’ ৫২ জনই মারা যান এ হাসপাতালে। এ হাসপাতালের বাইরে জেলার ৭টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বাসাবাড়িতে মারা যান ৮২ জন। ফলে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল যেনো করোনা রোগীর মৃত্যুর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণিত হয়েছে। হাসপাতালে আসার পরই মৃত্যু হয়েছে তাদের। এছাড়া শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনার উপসর্গ নিতে আরও ২শ’ ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইয়োলো জোনে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩শ’ ১১ জন রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে সন্দেহজনক করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইয়োলো জোন চালু করা হয়েছে।
হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে কিংবা সন্দেহজনক ও প্রমাণিত করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী সকলকেই বেগ পেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ডা. সৈয়দ সাজ্জাদ কামাল নামে একজন চিকিৎসক মারা গেছেন। আরও ২২ জন চিকিৎসক হয়েছেন ১শ’ ৩২ জন। ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ১১ জন ও ৪র্থ শ্রেণির ৩৩ জন কর্মচারীসহ সর্বমোট ১শ’ ৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ডা. মো. আরিফ আহমেদ আরও বলেন, করোনা রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি করোনা শনাক্ত কমরার জন্যে হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে আর্টিপিসিআর এ নমুনা প্রেরণ ও গত ৫ ডিসেম্বর থেকে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়। সে মোতাবেক যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সংগ্রহকৃত ২৫ হাজার ৮শ’ ১৪টি নমুনা পরীক্ষায় আর্টিপিসিআরএ করোনায় শনাক্ত ৬ হাজার ৬শ’ ৯৪ জন। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৩ হাজার ৫শ’ ৭২টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হন ১ হাজার ৩শ’ ৪৪ জন। হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৩শ’ ৮৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহকৃত ওই নমুনা পরীক্ষায় ৮ হাজার ৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে উল্লেখ করে ডা. আরিফ আহমেদ জানান, এ রোগে চলতি জুলাইতে সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চলতি জুলাই এ ১শ’ ৭৫ জন, গত জুনে ৬২ জন ও মে মাস পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিসের যে ফোকাল পার্সন ডা. রেহনেওয়াজ জানান, চলতি জুলাই যশোরে ১শ’ ৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। এ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৪১ জন। এ নিয়ে যশোর জেলায় করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৩শ’ ৩৪ জনের। করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৪শ’ ৮৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৮শ’ ৬২ জন। ৪ হাজার ২শ’ ১ জন আইসোলেশনে ও ৮৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে গত জুনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫শ’ ১৮ জন। মারা গেছেন ৬৫ জন। মে’তে আক্রান্ত ৫শ’ ৯৮ জন। সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানে মৃত্যু ৯ জন। এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২শ’ ২৭ জন। মৃত্যু ১১ জন। মার্চে আক্রান্ত ২শ’ ৬৪ জন। মৃত্যু ৩ জন। ফেব্রুয়ারিতে করোনায় আক্রান্ত ১শ’ ১৯ জন। মৃত্যু ২ জন ও জানুয়ারিতে আক্রান্ত ১শ’ ১৮ জনের মধ্যে ১ জন করোনায় মারা গেছেন বলে ডা. রেহনেওয়াজ জানিয়েছেন।